Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:13 pm

বেসরকারি খাতের বেতন নিয়েও ভাবা উচিত এবার

 

 

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বেতন বৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রী: মূল্যস্ফীতি কম হলে বেতন বাড়বে না’ শীর্ষক খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ কমিটির আলোচনায় উঠে আসে এমন বক্তব্য। উল্লেখ্য, কমিটিটি গঠন করা হয়েছে স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের পরিবর্তে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সেখানে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রতি বছর বাড়বে না। কোনো বছর যদি মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ শতাংশের কম হয়, তাহলে সে বছর কোনো ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের বেশি হলেই কেবল বেতন সমন্বয় করা হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ফের বাড়ছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। তার বিপরীতে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য ইস্যুটিতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করবে বলে প্রতীয়মান। খেয়াল করার মতো বিষয়, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন “নো ইস্যু অব অ্যানাদার ইনক্রিমেন্ট, নো। এটা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কীভাবে হবে। যেমন ২০১৭ সালে অনেক কিছুর দাম বাড়বে। পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের সঙ্গে ২০১৭ সালের ভিন্নতা আছে। সো তাতে কিছু দেওয়া হতে পারে” এবং “সো উই অলসো প্রমিজ, একটা অলটারনেটিভ সিস্টেম করতে হবে, যাতে অটোমেটিক্যালি ইনফ্লেশন ফ্যাক্টর ইজ টেকেন দেয়ার।” অর্থমন্ত্রী যদি প্রকৃতই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সরকারি চাকরিজীবীদের একটা ন্যায়সঙ্গত স্বয়ংক্রিয় বেতন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হন, তার জন্য তিনি ধন্যবাদপ্রাপ্ত হবেন। তাতে একশ্রেণির ব্যক্তি রুষ্ট হতে পারেন বৈকি। কিন্তু মানদণ্ড হিসেবে মুদ্রার প্রকৃত মূল্য প্রতিস্থাপিত হলে বেতন ব্যবস্থাটি অধিকতর অর্থশাস্ত্রসম্মত হবে বলে ধারণা।

মুদ্রার প্রকৃত মূল্য যদি মানদণ্ড হয়, সেক্ষেত্রে বেতন কাঠামোটি আরেকবার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে কি না, সেটি দেখা দরকার। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ যেন সংক্ষুব্ধ না হন, সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা উচিত। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের বেতন কাঠামো এবং এর বেতন ব্যবস্থার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। ‘বাজার অর্থনীতির যুগ’ আখ্যায়িত করে ইস্যুটিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। লক্ষণীয়, সরকারি খাতের বেতন ব্যবস্থা আগেও শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। ক্ষমতাসীন সরকার সেটিকে আরও মসৃণ ও যুগোপযোগী করেছে। তবে বেসরকারি খাতের বেতন ব্যবস্থা এখনও বিশৃঙ্খলায় পতিত বলে অনেকের ধারণা। এক্ষেত্রে মজুরি বোর্ড বা ওয়েজ বোর্ডের মতো কর্তৃপক্ষ দিয়ে মাঝে-মধ্যে এ খাতের বেতন ব্যবস্থায় সংস্কার আনার চেষ্টা করা হয় বটে; কিন্তু সেগুলোর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী এবং সংক্ষুব্ধদের চাপ ছাড়া তা গড়ে উঠতেও দেখা যায় না খুব একটা। ফলে এর পরিবর্তন জরুরি। অস্বীকার করা যাবে না, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সামান্য হলেও সরকারি খাতের বেতন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সেটি দৃশ্যমান। অথচ বেসরকারি খাতে একইভাবে বেতন বৃদ্ধির কথা জানা যায় না। উপরন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধিতে রয়েছে স্বচ্ছতার ঘাটতি। সুতরাং একে কঠোর নিয়ন্ত্রণ না হলেও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা চাই। আগামীতে বেসরকারি খাতকেই আরও বলিষ্ঠভাবে স্থানীয় অর্থনীতির নেতৃত্ব দিতে হবে। সেজন্যও কাজটি এখনই সম্পন্ন করা প্রয়োজন।