Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:42 pm

বেসরকারি খাতের ভোগ বাড়াতে উদ্যোগ নিন

 

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত বেসরকারি খাত বা ব্যক্তি খাতনির্ভর অর্থনীতি। দেশের মোট অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি খাতের দখলে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ব্যক্তি খাতের ভোগের অবদান প্রায় ৬৯ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি ঠিক রাখার জন্য ব্যক্তি খাতের স্বাস্থ্য ভালো থাকা আবশ্যক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যক্তি খাত ভালো নেই বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেশের ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। ব্যক্তি খাতের ভোগের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার অর্থ হচ্ছে এ খাতের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যাওয়া। আর এটি হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি খাতকে চাঙা করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য: ব্যক্তি খাতের নিম্নমুখী ভোগ ব্যয়ে কমবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাংক আভাস দিয়েছে যে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতের ভোগে প্রবৃদ্ধির হার করোনাকালের চেয়ে কম হবে। এর আগে ব্যক্তি খাতের ভোগ ব্যয়ে সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকায় ব্যক্তি খাতের ভোগ ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে সাত শতাংশ। ওই অর্থবছর মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে হারে ব্যক্তি খাতের ভোগ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে, তাতে সামনের দিনগুলোয় দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সঠিক ধারায় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের জিডিপি হিসাব করা হয় মূলত ভোগব্যয়ের ভিত্তিতে। আর এ ভোগব্যয় নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তি খাতের মাধ্যমে। ব্যক্তি খাতে ভোগ তখনই বৃদ্ধি পায় যখন বাজারের পণ্যমূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে। বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। করোনাকালে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। করোনার পর সেটি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের বাজার মূলত আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার। এখানে অনেক নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ কাজে আসছে না। ফলে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তা। এর ফলস্বরূপ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। আর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার অর্থ হচ্ছে মানুষের ভোগ হ্রাস পাওয়া। কাজেই মানুষের ভোগ বাড়াতে হলে তাদের হাতে অর্থের সরবরাহ বাড়াতে হবে। আর সেটি করতে হলে তাদের আয়-রোজগার বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য দরকার কর্মসংস্থান। বিশেষ করে উচ্চ বেতনের কর্মসংস্থান। আর সে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে শিল্প খাতে। কিন্তু দেশে কৃষ্টি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি খাতে ভোগ বাড়াতে হলে শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস।