বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ গতিশীল করার উদ্যোগ নিন

‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থাকেই তুলে ধরেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। গত ৩১ আগস্ট বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ঋণে এই প্রবৃদ্ধি গত ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কখনোই তা ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। বর্তমান মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ।

ঋণের প্রবৃদ্ধি কয়েকটি কারণে কমতে পারে পরে ধারণা। যেমন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতাও কমছে, বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ডলারের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায়ও এখন কেউ নতুন করে প্রকল্প নিতে চাইছেন না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কিছু কারণ এখনও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অবশ্যই সেগুলোয় মনোযোগ দিতে হবে। প্রথমত, ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট নিরসন করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে, ঋণ আদায় করতে হবে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে, তৃতীয়ত, রেমিট্যান্স যাতে বৈধ চ্যানেলে দেশে আসে, সে জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উদ্যোক্তারা অপেক্ষা রয়েছেনÑরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। তাই এ মুহূর্তে কেউ নতুন বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। এটি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রভাবক। আশা করা যায়, নির্বাচনের পর উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।

আমাদের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাতের দখলে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ খাত সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য দরকার বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ আসে ব্যাংকের মাধ্যমে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ স্থবির যাতে না হয়; নীতিনির্ধারকদের দূরদর্শী হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, আমরা আশাবাদী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০