বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের কমেছে। গত বছরের অক্টোবরে তার আগের তিন মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ১০ শংতাশের ওপরে উঠেছিল। তবে নভেম্বরে তা আবার কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়ায়। মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, এখনও তার নিচে রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। আর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা ক্রমাগত কমছে। এছাড়া বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ডলারের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এখন কেউ নতুন করে প্রকল্প নিতে চাইছেন না। আবার ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণ কম যাচ্ছে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায়। গত অক্টোবর শেষে এ ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ বাড়ালেও আগের তুলনায় সেভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়েনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের শেষের দিকে কমতে থাকা বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের শুরু থেকে বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে ফের কমে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে যায়। এরপর আবার টানা নয় মাস বাড়তে থাকে। ওই বছরের নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। তবে এর পরের মাস ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে টানা প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি কমে হয় ১২ দশমিক ৬২, ফেব্রুয়ারিতে ১২ দশমিক ১৪, মার্চে ১২ দশমিক ০৩, এপ্রিলে ১১ দশমিক ২৮, মে মাসে ১১ দশমিক ১০ এবং জুনে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে যায়। এরপর জুলাইয়ে গিয়ে দুই অঙ্কের নিচে নেমে গেছে। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগস্টে ৯ দশমিক ৭৫, সেপ্টেম্বর ৯ দশমিক ৬৯, যা ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কখনোই তা ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। গত বছরের অক্টোবরে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়ে হয় ১০ দশমিক ০৯ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের নিট প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কম। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে সমস্যায় পড়েছে। এসব জিনিস আগের তুলনায় অনেক কম আমদানি হচ্ছে। এখন বেসরকারি খাতে যে ঋণ যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভোগ্যপণ্য আমদানিতে।

তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার প্রতি মাসেই বাড়ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার পলিসি রেট চলতি অর্থবছরে কয়েকবার বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো বেশি রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য নিচ্ছে, এছাড়া গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়ায় গ্রাহকদের ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমছে। তাই এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমেছে ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমেছে ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও শিল্প খাতে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির নিম্নমুখী এই প্রবণতা শিল্প খাতের স্থবিরতার ইঙ্গিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০