নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি জুলাই মাসে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে উঠেছে, যা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা ছাড়িয়ে গেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য রাখা হয়েছিল ১৩ শতাংশ ৬০ শতাংশ। জুলাইয়ের প্রবৃদ্ধি ৪৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
গত ৩০ জুন নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেছিলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হবে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু জুন মাসে গত বছরের জুনের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলেছেন, করোনার পর অনেক ক্ষেত্রে চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে আমদানি চাহিদাও ব্যাপকহারে বেড়েছে। দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আর এটি বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে গত জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ফেব্রুয়ারিতে এ প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে। জুন মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে। আর সবশেষ জুলাইতে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে ওঠে। এর অর্থ হলো ২০২১ সালের জুলাই মাসের চেয়ে এ বছরের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের জুলাই শেষে ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১০ কোটি টাকা। এ হিসাবেই ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে এটা আমদানির জন্য বেড়েছে নাকি উৎপাদনশীল খাতের জন্য, তা দেখতে হবে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকূল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছেন। ব্যাংকগুলো তাতেও বিনিয়োগ করছে।
তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণে একটি গতি এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লেগেছে। তাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি বাড়তে থাকায় আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে; দুর্বল হতে থাকে টাকা। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (ব্যাংক রেট) টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।