বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত বেসরকারি খাতনির্ভর। দেশের মোট জিডিপির ৮২ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। আর দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯৭ শতাংশই বেসরকারি খাতে। কাজেই বেসরকারি খাতের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা না গেলে দেশের পুরো অর্থনীতিই সংকটের মুখে পড়বে। তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের কমেছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছরের অক্টোবরে তার আগের তিন মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ১০ শংতাশের ওপরে উঠেছিল। তবে নভেম্বরে তা আবার কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়ায়। মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এখনও তার নিচে রয়েছে।
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো খবর নয়। এ খাতে ঋণ কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ খাতের সম্প্রসারণ সংকুচিত হয়ে পড়া। আর বেসরকারি খাত সংকুচিত হয়ে পড়লে পুরো দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে কর্মসংস্থানের ওপর চাপ পড়বে। দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হয়। এদের মধ্যে সরকারিভাবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান করা সম্ভব। বাকি কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। সুতরাংশ বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রধানতম উপায় হচ্ছে ব্যাংকঋণের মাধ্যমে ব্যক্তি খাতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধিকরণ।
মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ বর্তমানে জনতিমিক লভ্যাংশকাল অতিক্রম করছে। এটি এমন একটি সুযোগ যা যে কোনো দেশে একবারই আসে। কোনো দেশে নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত যদি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর চেয়ে কম হয়, তাহলে সেই দেশ জনমিতিক লভ্যাংশে আছে বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই সুযোগ যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকে না। বাংলাদেশেও এ সুযোগ ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কাজেই এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর সেই কাক্সিক্ষত উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে বেসরকারি খাত। সুতরাং বেসরকারি খাত যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারে এবং কাদের কর্মপরিধি সম্প্রসারণের সুযোগ পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটি করার জন্য এ খাতের সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার পাশাপাশি অর্থের সরবরাহও ঠিক রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।