বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত বেসরকারি খাতনির্ভর। দেশের মোট জিডিপির ৮২ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। আর দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯৭ শতাংশই বেসরকারি খাতে। কাজেই বেসরকারি খাতের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা না গেলে দেশের পুরো অর্থনীতিই সংকটের মুখে পড়বে। তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আশানুরূপ নয়। এমন পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। ‘বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি আবার কমেছে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা স্বাভাবিক কারণেই উদ্বেগের বিষয়।
এতে বলা হয়েছে, এক মাস পরই আবার ছন্দপতন ঘটেছে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ খাতে বার্ষিক ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের ৯ শতাংশের ঘরে নেমেছে। আগের মাসেও বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বৃদ্ধি, ডলার সংকটে আমদানিতে ধীরগতি এবং ব্যাংক খাতে চলমান তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষষ্টরা।
নানা কারণে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করেছে। মালিকানা বদল, একক আগ্রাসী ব্যাংকিং ঠেকাতে এডিআর কমানো, ব্যাংক (কোম্পানি) আইন সংশোধন, মালিকদের উদ্যোগে সুদহার কমানোসহ বিবিধ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম সরব ছিল। সব ছাপিয়ে উঠেছিল সুশাসনের কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলতে বাধ্য হয়েছেন, আধুনিক ও অভিনব সেবা চালু সত্ত্বেও সুশাসন না থাকলে ব্যাংক খাত টিকে থাকতে পারবে না। ব্যাংক আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বিরোধিতা করে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, তড়িঘড়ি করে বিল পাস করলে এটি পারিবারিক ব্যাংক হবে। আরও লুটপাট হবে। মানুষ পথে বসবে। ব্যাংক লুটপাট বাড়বে। পুরো ব্যাংক খাত ধসে যাবে। বিরোধিতা সত্ত্বেও ওই আইন পাস হয়েছে। মালিকদের প্রভাব বেড়েছে।
ব্যাংকের পরিচালকদের অনেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং কয়েকজন পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন-পুরোনো নিলে অন্তত ২০ জন ব্যাংক পরিচালক ও আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যাংক খাত আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিই নয়, এটি কর্মসংস্থানের বড় উৎসও বটে। আশা করব, ব্যাংক খাতের উন্নয়নে সরকার, মালিক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে। বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। ভারসাম্য রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে উপায় খুঁজতে হবে। ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহের টার্গেট বাড়ানোসহ বিনিয়োগবান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।