বেসরকারি খাতে বাড়ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ, কমছে সরকারের ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত। কারণ উল্টো পথে চলতে থাকা বেসরকারি ঋণের হার বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া সরকারের ঋণের হার একেবারে কমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৩৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের দেনা শোধ করেছে ১৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। সুতরাং ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। এখনও রাজস্ব আদায়ের হার সেভাবে বাড়েনি। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) অর্থের প্রয়োজন। বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলমান। এজন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। ব্যাংক থেকে যেকোনো পদ্ধতিতে সহজে ঋণ নেয়া যায় বলে সরকার এদিকে যাচ্ছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাংকগুলোয় তারল্যর সরবরাহে কোনো চাপ তৈরি না হয়।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছর (২০২১-২২) সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (ডিসেম্বর) নতুন ঋণ নেয়া ও পুরোনোর সুদ-আসল পরিশোধ শেষে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।

এ সময় সরকার ঋণ নেয়ার পাশাপাশি পুরোনো ঋণের সুদ ও আসল কিছু পরিশোধ করেছে। ব্যাংকারদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার কভিডকালে ঋণ চাহিদা কম ছিল, কিন্তু আমানতকারীদের ঠিকই সুদ দিতে হবে। এজন্য অপেক্ষাকৃত কম সুদ হলেও সরকারের বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। তখন এ খাত থেকে ইল্ড বা মুনাফার হার ছিল পাঁচ শতাংশ। এখন  তা সাড়ে সাত শতাংশে চলে এসেছে। ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করলে সোয়া আট শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা নিতে পারবে। এজন্য এখন ব্যাংকগুলো আরও আগ্রহী হয়ে উঠছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার কারণে বেসরকারি ঋণের হার নেমে এসেছিল সর্বনি¤েœ। তবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে খাতটি।

তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দা চলছে। ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। তবে গত নভেম্বরে ব্যাংকে বেসরকারি খাতের ঋণেরও চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। ওই মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগের মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তা আরও কমতে থাকে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। গত দুই বছর ধরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) আছে।

যদিও ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসাবে এটি সব সময় ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল একপর্যায়ে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০