Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:07 pm

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে

এবার বেসরকারি খাত থেকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বেশি ধরা হয়েছে, যা ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের যে অবস্থা, তাতে এ খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এবার মুদ্রানীতিতে সেটা দেখা যায়নি। যদি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করা না হয়, তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আয়ে প্রভাব পড়বে এবং নতুন করে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক সচিব ও চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডিনিউজ প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার এক বছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আগে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতো। এবার বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশের মতো। কিন্তু চার থেকে পাঁচ বছর ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২০ থেকে ২২ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। আসলে গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যেটি ধরা হয়েছিল, বাস্তবে সেটি অর্জিত হয়নি। তবে এবার বেসরকারি খাত থেকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বেশি ধরা হয়েছে, যা ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ কয়েক বছর ধরে এ খাতে বিনিয়োগের যে অবস্থা, তাই এ খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এবার মুদ্রানীতিতে সেটা দেখা যায়নি। যদি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি না করা হয়, সেক্ষেত্রে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আয়ে প্রভাব পড়বে এবং নতুন করে কর্মসংস্থানে সমস্যা সৃষ্টি হবে। সরকার ব্যাংক ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। গত বছর রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা পরে সংশোধন করা হয়েছিল। সংশোধিত হওয়ার পর রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেটিও আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল। সুতরাং এবারের বাজেটে যেটা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জিত হবে না। যদি অর্জিত না হয় সেক্ষেত্রে ঋণের ওপর চাপ পড়বে। এ বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। আবার বিগত বছরে সরকার সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এ খাত থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসত, কিন্তু এবার সরকার সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন খাতে কিছু নীতিমালা তৈরি করেছে। বিশেষ করে কর বৃদ্ধি। বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনতে গেলে কর দিতে হবে।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, ব্যাংক খাতে ডিপোজিটের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ব্যাংকে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে ভালো একটা প্রফিট এবং বিনিয়োগ করা অর্থ নিরাপদে থাকা। কিন্তু এখন ব্যাংক খাতে টাকা রাখা সেভাবে নিরাপদ নয় এবং ব্যাংক খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ শতভাগ নিরাপদ এবং কোনো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় না। আবার কর বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ভালো একটি প্রফিট দেওয়া হয়। তাহলে মানুষ ব্যাংক থেকে কেন আসবে না সঞ্চয়পত্রে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তেমন ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে বলতে গেলে এবার বাজেটে জিডিপির গ্রোথের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ, এটি অর্জন করা বড় কঠিন হবে এবং সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির উন্নয়ন, ব্যাংক, আর্থিক খাত এবং পুঁজিবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ