Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 8:34 pm

বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সেবার মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ

আয়নাল হোসেন: পেটের একটি আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য সরকারি হাসপাতালে মূল্য নেওয়া হয় ২২০ টাকা এবং তলপেটের জন্য ১১০ টাকা। একই সেবার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আদায় করছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। আবার রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় ১৭০ টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সেবায় আদায় করছে ৪০০ টাকা।

শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই নয়। শয্যা ভাড়া, ক্যাবিন ভাড়াসহ বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য আদায় করছে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে অস্বাভাবিক মূল্য আদায় করতে না পারে, সেজন্য সরকার সব ধরনের সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এজন্য আগামীকাল বৈঠকে বসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের এই উদ্যোগ খুবই ভালো একটি কাজ। তবে সেবার মান ও যন্ত্রপাতির মান ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিশেষায়িত পর্যায়ে স্তরভিত্তিক থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ মনিটরিং ও সুপারভিশন থাকতে হবে। তাহলে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মানুষ কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো অস্বাভাবিকভাবে মূল্য আদায় করে আসছে। কোথাও ক্যাবিন ভাড়া দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আবার কোথাও চার থেকে ১২ হাজার টাকা। আইসিইউ সেবার ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন মূল্য আদায় করা হচ্ছে। তবে এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জনবলের কাঠামো নিশ্চিত করেনি। আবার সেবার বিনিময়ে মূল্য আদায় করা হলেও সেবার মান কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য জিনিসের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

জানা গেছে, দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগীকে বেশি সময় দিতে চান না। অপরদিকে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান ভালো না থাকায় অনেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণ করছেন, যদিও সরকারি হাসপাতালে উন্নত যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন ক্যাটেগরির সেবার মূল্য কত নেবে সরকারের পক্ষ থেকে তা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে একেক প্রতিষ্ঠান একই সেবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মূল্য আদায় করছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তিগত খরচ বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আগামীকাল দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মূল্য, ক্যাটেগরি ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করতে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সারা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার।

আগামীকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে এজন্য একটি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সারা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিভিন্ন ধরনের সেবার মূল্য, লাইসেন্স প্রটোকল নির্ধারণ, ক্যাটেগরি নির্ধারণ, প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সরঞ্জামের মান নির্ধারণ ও বিবিধ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক), বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবামূল্য, ক্যাটেগরি ও লাইসেন্স ক্যাটেগরি নির্ধারণ কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ খুবই ভালো। তবে এটি অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তবে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডেলিভারি ও জরুরি সেবা যাতে বিনা মূল্যে করা হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বেসরকারি পর্যায়ে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, টারশিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফারেল পদ্ধতিও কার্যকর থাকতে হবে।