Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:32 pm

বেসরকারি বিনিয়োগ যেন বিঘ্নিত না হয়

 

একটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে ভারসাম্যের বিধান করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ঋণ ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ যেহেতু বেসরকারি খাত নির্ভর অর্থনীতির দেশ, কাজেই এখানে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। কিন্তু সরকারের ঋণ গ্রহণের যে পরিস্থিতি তাতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য: বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১২ গুণের বেশি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস ২২ দিনে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ গুণের বেশি।

সরকারের ঋণ গ্রহণের এমন চিত্র কোনোভাবেই বেসরকারি খাতের জন্য আশাব্যঞ্জক হতে পারে না। সরকার যদি ব্যাংক থেকে বেশিরভাগ ঋণ নিয়ে ফেলে, তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হলে তার নানামুখী প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। ফলে কমে যাবে কর্মসংস্থান, রপ্তানিতে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। এছাড়া প্রভাব পড়বে রাজস্ব আহরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় বিকল্প উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাতের দখলে। কাজেই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে বেসরকারি খাতের কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর করতে হবে। পৃথিবীতে যেসব দেশ উন্নতি করেছে তারা বেসরকারি খাতের ওপর ভর করেই তা করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় ব্যবসা অত্যন্ত সহজীকরণ করা হয়েছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিদেশিরাও সহজে ব্যবসা করতে পারেন। এই সুযোগ দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে, যাতে অন্য দেশের নাগরিকরা সেখানে অর্থলগ্নি করে। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থলগ্নি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এমনকি ব্যবসা করতে গেলে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। এসব কারণে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা ব্যবসা করার সাহস করেন না। আর যেসব কারণে এখানে ব্যবসা করা কঠিন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহজ শর্থে ঋণ না পাওয়া। আর সহজ শর্তের ঋণ নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংক খাতকে আরও উদার হতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে যে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ফেরত দেন না। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা কম। বরং এসব উদ্যোক্তা সঠিকভাবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে থাকেন। মূলত ঋণ কেলেঙ্কারি পেছনে মূল হোতা হিসেবে কাজ করেন বড় ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।