বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় আসতে পারে বড় অঙ্কের অর্থ

সম্প্রতি সরকার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। আর তা হচ্ছে, সরকারি ব্যাংগুলোর ৫০ শতাংশ ডিপোজিট বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখার সিদ্ধান্ত। কারণ কয়েক বছরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর সরকার তা অনুধাবন করেই হয়তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে এ খাতটি পিছিয়ে না পড়ে। প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার মতো সরকারি ডিপোজিট বিভিন্ন ব্যাংকে আছে। যার ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছিল এবং এখন সেটিকে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আগামীতে আরও ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় আসার সম্ভাবনা আছে। আর এটি হওয়া মানেই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ এবং ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মো. আমিনুল ইসলাম।
ফোরকান উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি সার্কুলারের কারণে পুঁজিবাজার যখন ধীরগতির হয়ে যায়, তখন সরকার কিন্তু বেশ তৎপর হয়ে গিয়েছিল বাজারের ব্যাপারে। তখন মানি মার্কেট নিয়ে যেমন কাজ হয়েছে, একই সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়েও কাজ হয়েছে। কারণ তারল্য সংকটের ফলে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট দুটোরই সমস্যা হচ্ছিল। তাই তারল্য সংকট সমাধানে সরকার যখন মানি মার্কেটকে চিহ্নিত করেছে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাপিটাল মার্কেটকেও চিহ্নিত করা হয়ে গেছে। কারণ তারল্য সংকট দূরীকরণে সিআরআর এক শতাংশ কমিয়ে দেওয়া, সার্কুলার ইস্যু হয়ে যাওয়া, এডি রেশিওকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ হওয়ায় পুঁজিবাজারেও এর সুফল একটি নির্দিষ্ট সময় পরে গিয়ে পাওয়া যাবে। তাছাড়া এক্সপোজারের বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে কাজ করা হচ্ছে। সব দিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারের প্রতি সরকারের অন্তরিকতার কোনো অভাব দেখা যাচ্ছে না। তাই আশা করা যায় সামনে বাজার ভালো হবে। অন্যদিকে এটি নির্বাচনের বছর এবং পুঁজিবাজারে সঙ্গে এক-দেড় কোটির মতো ভোটার জড়িত। তাই এ বছরে এসে সরকার কোনো ঝুঁকি নেবে না বলেই মনে করি। তাছাড়া ঝুঁকি নেওয়া বা না নেওয়া থেকেও বড় কথা এটি অর্থনীতির জন্য কতটা জরুরি, সেটি দেখা। আর সেটি যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলেও কোনো ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই এখানে। তবে এতকিছু করার পরও মাঝখানে বাজার মাত্র দু-চার দিন বেড়েছিল; তারপর আবার আগের মতো আচরণ করছে। এখন কথা হচ্ছে, সরকারকে উপেক্ষা করে কারা এ কাজগুলো করছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার বলে মনে করি। এছাড়া এক্সপোজারের কাজটিও যদি হয়ে যায়, তাহলে বাজার-সংশ্লিষ্টদের কোনো চাওয়াই আর বাকি রাখল না সরকার। তখন কিন্তু পুঁজিবাজার খারাপ হওয়ার কোনো কারণই আর থাকে না।
মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার কয়েক মাসে বেশ চড়াই-উৎরাই পার করে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আমরা দেখেছি সূচক ছয় হাজার ৩০০-৪০০ পয়েন্টের মতো হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক খাতে হঠাৎ তারল্য সংকটের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে আমরা যদি তিন-চার মাস আগের ও বর্তমান বাজারের কথা চিন্তা করি, তাহলে কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য দেখা যাবে না। তারপরও বিভিন্ন কারণে বাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তা আসলেই প্রশংসার দাবিদার। এর মধ্যে একটি সাহসী পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে আর তা হচ্ছে, সরকারি ব্যাংগুলোর ৫০ শতাংশ ডিপোজিট বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখতে পারবে। তাছাড়া আমাদের দেশে কয়েক বছর যাবৎ প্রবৃদ্ধিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই হয়তো সরকার তা অনুধাবন করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে এ খাতটি পিছিয়ে না পড়ে। প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার মতো সরকারি ডিপোজিট বিভিন্ন ব্যাংকে আছে। যার ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছিল এবং সেটিকে এখন ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আরও ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় আসার একটি সম্ভাবনা আছে। আর এ বিষয়টি হয়ে গেলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় যে তারল্য সংকট ছিল, সেটি হয়তো আর থাকবে না। কাজেই যখন তারল্য সংকট আর থাকবে না, তখন ব্যাংকগুলোর সুদহার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কমে যাবে। আর এটি হওয়া মানেই পুঁজিবাজারে একটি ইতিবাচক প্রভাব আসা।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০