সুশাসন ও জবাবদিহি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যাংক খাতে এ দুটি বিষয়ের অভাব প্রকট। ফলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংক খাতে সুশাসন নেই, এটি অস্বীকার করবে না কেউ। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, কিংবা ব্যবস্থা নেয়া হলেও সুফল মিলছে না বলেই প্রতীয়মান। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা প্রভৃতি দেখে এখন সাধারণ মানুষও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা বোঝেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় সংঘটিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রভৃতি অব্যবস্থাপনার পর নতুন কেলেঙ্কারির খবর আসছে। ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে অনেক আগেই।
বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির বাইরেও গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, গ্রাহককে সহযোগিতা না করা, ব্যস্ততার নামে গ্রাহককে বসিয়ে রাখা ইত্যকার অনেক অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকের। সব সময় দেখা যেত সরকারি ব্যাংকে গ্রাহকরা পাত্তাই পান না। সে তুলনায় সুনাম ছিল বেসরকারি ব্যাংকের। সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কর্মকর্তারা হাসিমুখে কথা বলেন, সেবাদানে আন্তরিক থাকেন। সময় পাল্টেছে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও আন্তরিক সেবা দেন না, গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কমেছে তাদের! এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে অনেকদিন ধরে। সবাই অভিযোগ করেন না, অভিযোগ করার নিয়ম অনেকে জানেন না; আবার অভিযোগ করলে বিষয় সত্য হলেও হয়রানির আশঙ্কায় অনেকেই এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার। এই প্রতিবেদনের তথ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তিন হাজার ৬৩৩টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। সব অভিযোগই নিষ্পত্তি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রাহকদের অভিযোগের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৯৭৪টি। ওই সময়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় চার হাজার ৯৫০টির বা ৯৯ দশমিক ৫২ শতাংশের। এক বছরের ব্যবধানে অভিযোগ বেড়েছে এক হাজার ৩৪১টি বা ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রাহকদের মোট অভিযোগের ৬৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যাংকিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। সাধারণ ব্যাংকিং সেবা নেন সাধারণ মানুষ। এরা জালিয়াতি কিংবা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। কার সাতেও নেই পাঁচেও নেইÑএমন নিরীহ গ্রাহক দুর্ব্যবহারের শিকার হলে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমবে। এখন সুদহার সব ব্যাংকেরই প্রায় সমান। তাই ভালো সেবা দানের মাধ্যমেই গ্রাহক-আস্থা অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে।
ব্যাংক খাতের জন্য প্রণীত নীতিমালা ও আইনকানুন, কোম্পানি আইন, আন্তর্জাতিক নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে যদি সাধারণ গ্রাহক আস্থা হারিয়ে ফেলেন তাহলে প্রমাণ হয় ব্যাংককর্মীরা দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কী কাজে লাগল আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা! ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা এবং শূন্য সহনশীলতায় গ্রাহক-অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করা।