Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:53 am

বেসরকারি শিল্পমালিকরা বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের প্রধানতম বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। গত কয়েক বছরের ব্যবসা ও বাণিজ্যে সহায়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এতে উৎসাহিত হয়ে বেসরকারি শিল্পমালিকরাও নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তোলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এসব বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে।

চট্টগ্রাম শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক খাতে নতুন কোনো সংযোগ দেয়নি। তবে শিল্প ও ক্যাপিটিভ পাওয়ারের ১০ নতুন প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দেয়। অপরদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন খাতের শিল্পমালিকরা বলেন, দেশের প্রধানতম বন্দর ও বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। এ শহরের বাণিজ্যিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়ানোর জন্য সরকার একে একে গড়ে তুলছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল, দেশের প্রথম টানেলসহ অনেকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক প্রকল্প। পাশাপাশি বিনিয়োগ-সহায়ক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পাওয়ার হাব ও চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতা ও সুবিধা বাড়ানোর কাজ চলছে। এত সম্ভাবনায় উৎসাহিত হয়ে বেসরকারি খাতের শিল্পমালিকরা নতুন নতুন বিনিয়োগে শিল্প স্থাপন কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু কারখানা চালুর জন্য গ্যাস সংযোগ না পেয়ে অলস বসে আছে কারখানাগুলো। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনি একটি কোম্পানি বিএসএম গ্রুপের জেকে ফোম লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বোয়ালখালীতে অবকাঠামোগতসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু গ্যাস সংযোগের জন্য উৎপাদনে আসতে পারছে না দুই বছর ধরে।

শিল্পমালিকরা বলছেন, দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আইন মেনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু নতুন নিয়ম ও নতুন আইন তাদের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ চাই। কিন্তু আমাদেও দেশে ঘনঘন পলিসি ও ল পরিবর্তন হয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল নয়।  

চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্পগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোয় নীতি ও আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল। সেজন্যই তাদের থেকে আমাদের এফডিআই অনেক কম। একদিকে আমাদের বলা হয়, ‘বিনিয়োগ করো’Ñআমরা বিনিয়োগ করলাম;

 এরপর নীতি পরিবর্তন করে ফেললেন। এখন তো নতুন বিনিয়োগ আসবে না, আমাদের বিনিয়োগই ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর সমাধান রাষ্ট্র করছে না। অথচ বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।’

এ বিষয়ে জানার জন্য কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাকলায়েনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক কেজিডিএলের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বর্র্তমানে যেসব গ্রাহক আছে, তাদের চাহিদা দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু বিপরীতে আমরা পাচ্ছি ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ আমাদের গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক সক্ষমতা ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর শিল্প সংযোগ দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিই। কিন্তু আমাদের এলএনজি আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। 

চট্টগ্রামের শিল্প খাতে গ্যাস বিষয়ে সাম্প্রতিক ওএসএস সেবা নিয়ে আলাপকালে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার ঘোষণাটা দুঃখজনক। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুধু গ্যাসের অভাবে কারখানা চালু করতে পারছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে অবহিত করবে।