নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এটি খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে উচ্চ হার। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। এদের খেলাপি ঋণের হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে। আর বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।
গতকাল রোববার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রথম প্রান্তিকের মধ্যাহ্নভোজ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক হয়েছে, তা আমি বলব না। তবে এটি একটি ভীতিকর অবস্থা। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সতর্কভাবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সভায় এমসিসিআই’র পক্ষ থেকে ঋণের সুদ হার কমানোর প্রস্তাব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর বলেন, ঋণের সুদ হার না কমার জন্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ রয়েছে। বেশি খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। ফলে তাদের মুনাফা কমে যাচ্ছে। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো চাইলেও খুব সহজে সুদের হার কমাতে পারছে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, এসএমই ঋণে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখনও ১৪ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে, যা কাম্য নয়। দেশের অর্থনীতিকে স্থায়ীভাবে শক্তিশালী করতে হলে এ খাতের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নিয়ে আসতে হবে।
এছাড়া নতুন কোনো কারখানা তৈরির মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি খরচের ওপর করসীমা সর্বমোট ৬ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ; বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অর্থ শুধু তৈরি পোশাক খাতে বিতরণ না করে রফতানিমুখী সব খাতে বিতরণ করা এবং সর্বস্তরের ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার বিষয়েও এমসিসিআই’র পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনটির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর বলেন, এসএমই ঋণের সুদ হার কোনো সমস্যা না। যেটি সমস্যা, যার মূলে রয়েছে জামানত। এ খাতের উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত জামানতের অভাবে ভোগে এবং আবেদনের পর ঋণ পেতে দেরি হয়। তবে এ খাতের ঋণের সুদহারের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট হারে কৃষিঋণ বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তেমনি এসএমই ঋণের জন্যও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে।
সম্প্রতি রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার জন্য তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন, প্রবাসীদের বাড়তি কাজের সুযোগ (ওভার টাইম) কমে যাওয়া এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থ প্রদান উল্লেখযোগ্য কারণ। এরপরও এ বিষয়ে গবেষণার জন্য দুটি আলাদা টিম কাজ করছে। সরেজমিনে জানতে তারা বিদেশ যাবেন।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম দেশের বাজারে সমন্বয় করার প্রস্তাব করে এমসসিসআই’র পক্ষ থেকে বলা হয়, এর সুবিধা সর্বস্তরের ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করার আহ্বান জানায়। বিশেষ করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য সমন্বয় করতে বিশেষ দাবি জানয়েছে ব্যসায়ীদের এ সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং এমসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি আনিস এ খান, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।