Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:58 pm

বেহরুজ ইস্পাহানির মৃত্যুতে আমরা শোকাহত

ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি ২৩ জানুয়ারি সোমবার ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছি সহমর্মিতা। দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ৬৬ বছর বয়সে মারা যান। দেশের অর্থনীতির বিকাশ ও করপোরেট সামাজিক দায়িত্ববোধের (সিএসআর) জায়গা থেকে তিনি নানা ধরনের কাজে যুক্ত ছিলেন। একজন আপাদমস্তক ব্যবসায়ী হিসেবে যেমন সুমান অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছিলেন, তেমনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরভাবে সিএসআর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন তিনি।

তার মৃত্যুতে দেশ একজন পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ীকে হারালো। ১৮২০ সালে ইস্পাহানি গ্রুপের প্রধান হাজি মোহাম্মদ হাশেম ইস্পাহানি পারস্যের ইস্পাহান থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকায় তাদের প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৮৮ সালে শাখা অফিস চালুর মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালের পর কোম্পানির করপোরেট হেড অফিস স্থানান্তর হয় চট্টগ্রামে। ইস্পাহানি গ্রুপ চায়ের জন্য বিখ্যাত। চা ছাড়াও কোম্পানিটি টেক্সটাইল, খাদ্য, পাট, শিপিংসহ নানা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ইস্পাহানি গ্রুপ দেশের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসেরও অংশীদার। এর বাইরে মির্জা আলী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ও মাইডাসের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিরও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ইস্পাহানি গ্রুপ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকার ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতাল, যেখানে গরিব রোগীরা সহজে মানসম্পন্ন চক্ষুসেবা পাচ্ছে। এমএম ইস্পাহানি ইনস্টিটিউট অব অফথ্যালমোলজির কথাও বলা যেতে পারে, যা বিশ্বখ্যাত চক্ষু প্রতিষ্ঠান সেইবার্স ইন্টারন্যাশনাল ও অরবিসের সঙ্গে পালন করছে যৌথ কর্মসূচি। শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারেও এ গ্রুপ অবদান রেখে চলেছে। গ্রুপটি ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক সেবার নানা দিকে প্রথম থেকেই উদ্যোগী এ গ্রুপটি, যা সত্যি বিরল।

গ্রুপের প্রধান হিসেবে মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানিও প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলের অনেকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন; কিন্তু তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক খবর দেখা যায়নি বললেই চলে। স্বচ্ছতা ও সুনামের সঙ্গে পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে বাংলাদেশে। ২০০৪ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেভাবে তিনি নিজে গ্রুপের কার্যক্রম দেখাশোনার মাধ্যমে ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি বিভিন্ন সিএসআর কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিলেন, এতে তার মধ্যে একজন দক্ষ প্রশাসকের পরিচয়ই প্রকাশ পায়। তার প্রয়াণে দেশ একজন নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী ও দরদি সমাজসেবীকে হারালো।