মাসুম বিল্লাহ: কম মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে স্বল্পসুদে ঋণ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে পাওয়া ঋণের সুদও বাড়তে শুরু করেছে। আগামী অর্থবছর থেকেই বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণের সুদ বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে।
সহজ শর্তে বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। বর্তমানে মার্কিন ডলারে পরিশোধের ক্ষেত্রে এ ঋণের সুদ এক দশমিক ২৫ শতাংশ। আর এসডিআর-এ (আইএমএফ কর্তৃক সৃষ্ট বিশেষ রিজার্ভ পদ্ধতি) পরিশোধের ক্ষেত্রে দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সুদও বেড়ে যায়। সে নিয়মের ফলেই আগামী অর্থবছর থেকে বাড়বে আইডা থেকে পাওয়া ঋণের সুদ।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, কোনো দেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৮৫ ডলারের ওপরে উন্নীত হয়ে তা পর পর তিন বছর অব্যাহত থাকলে সেই দেশ আর আইডা তহবিলের স্বল্প সুদের সুবিধা পাবে না। এক হাজার ১৮৫ ডলার পর পর দুই বছর অব্যাহত থাকলে সেই দেশ আইডিএ ‘গ্যাপ’ মর্যাদা পাবে। আর তৃতীয় বছর থেকে সেই দেশের জন্য ‘বেøন্ড’ সুদহার প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে মার্কিন ডলারে পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের বেøন্ড সুদহার দুই দশমিক ৬২ শতাংশ। আর এসডিআরে পরিশোধের ক্ষেত্রে এ হার দুই শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, গত অর্থবছরই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৮৫ ডলার অতিক্রম করেছে। চলতি অর্থবছর ধারাবাহিকভাবে তা দ্বিতীয় বছরের মতো অব্যাহত রয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ বেøন্ড সুদের পর্যায়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী কোনো দেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৮৫ ডলার অতিক্রম করলে সেই দেশ ‘গ্যাপ’ স্ট্যাটাসে পড়ে যাবে। এ স্ট্যাটাসে কোনো দেশ ধারাবাহিকভাবে তিন বছর অবস্থান করলে তদের ক্ষেত্রে বেøন্ড সুদহার প্রযোজ্য হবে। সেই মোতাবেক আগামী অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশের জন্য বর্ধিত সুদহার প্রযোজ্য হবে।
এদিকে বর্ধিত সুদ পরিশোধের বিষয় জানিয়ে গত মাসের প্রথম দিকে ইআরডিতে চিঠি দেয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়। কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফানের পাঠানো ওই চিঠিতে জানানো হয়, বেøন্ট কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কমে আসবে। বর্তমানে আইডিএ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ৩৮ বছর সময় পায়। আর এক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড ছয় বছর। গ্যাপ কান্ট্রি হওয়ার ফলে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছরে নেমে আসবে। আর গ্রেস পিরিয়ড কমে হবে পাঁচ বছর।
গ্যাপ কান্ট্রির শর্ত অনুযায়ী, কোনো দেশ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ বছরে ঋণ পরিশোধ করলে সুদের হার দাঁড়াবে তিন দশমিক ৪০ শতাংশ। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করলে তিন দশমিক ৭০ শতাংশ। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৪ বছরের মধ্যে পরিশোধ করলে চার দশমিক শূন্য তিন শতাংশ সুদ দিতে হবে।
Add Comment