বৈঠক ডাকার খবরে সামান্য উত্থান

মো. আসাদুজ্জামান নূর: বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠক ডাকার খবরেও সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে গতকাল সোমবার উত্থান দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। তবে খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে কিছুটা।

আগের দিন ১১ পয়েন্ট সূচক পতনের দিন অনেক কোম্পানির শেয়ারদর দিনের নি¤œতম সীমায় লেনদেন হয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন হতাশ। সোমবার লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। এক ঘণ্টার মধ্যে সূচক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হয়।

আগের দিনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, তারা বুধবার বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বসবেন। নানা সময় এই ধরনের বৈঠককে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেয়। তবে গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই বৈঠক শেষে ফলপ্রসূ তেমন কোনো ঘোষণা আসে না। আর ঘোষণা এলেও বাজারে প্রভাব পড়ে না। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এখনও অনেকটাই সতর্ক। ফলে দিন শেষে মাত্র ১৬ পয়েন্ট সূচক বেড়ে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ছয় হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে। এছাড়া অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ৭ ও ডিএস৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার দিন থেকে পুঁজিবাজারে ধস নামে। টানা আট দিনে ৩৮২ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বিএসইসি দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ নির্ধারণের পাশাপাশি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা জরুরি বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়। এরপর ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসে বিএসইসি। দুই পক্ষই বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়েনি। ১০ ও ১৫ মার্চ এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ২০ মার্চ তা নেমে আসে ৬১৬ কোটি টাকায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে।

সোমবার লেনদেন হয়েছে ৯২৪ কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে প্রকৌশল খাত। মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৬ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। এর পরই আইটি খাতে ১২ দশমিক ১ শতাংশ লেনদেন হয়। এছাড়া ফার্মা ১১ দশমিক ২, বস্ত্র ৮ দশমিক ৩, বিবিধ ৭ দশমিক ৬, সাধারণ বিমা ৭ দশমিক ১ ও ব্যাংক খাতে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। আর কোনো খাতের লেনদেন ছয় শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি।

দিন শেষে বেড়েছে ১৭৬টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৫৩টির। আর অপরিবর্তিত থাকে ৫০টির দর। এদিন সবচেয়ে ভালো করেছে সাধারণ বিমা খাত। এ খাতের ৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩টিরই, কমেছে পাঁচটির। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ২১টির, কমেছে ১০টির দর। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতেও বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। ছোট খাতগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও চামড়া খাতের প্রায় সবকটি শেয়ারের দর বেড়েছে।

দারুণ লভ্যাংশ ঘোষণার পরও ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর তলানিতেই রয়ে গেছে। এ খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারদর, যেটি শেয়ারপ্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পরদিন শেয়ারদরে যোগ হয়েছে ৭০ পয়সা। গতকাল সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির পাঁচটিই স্বল্প মূলধনি। এর মধ্যে এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে দুটি কোম্পানি। আট শতাংশের বেশি বেড়েছে আরও দুটি কোম্পানির দর। সাত শতাংশের বেশি বেড়েছে একটির। ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে সাধারণ বিমা খাতের একটি ইন্স্যুরেন্সের দর। এর পরের অবস্থানে থাকা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির মধ্যে দুটির দর বেড়েছে ছয় শতাংশের বেশি, একটির বেড়েছে পাঁচ শতাংশের বেশি। দশম স্থানে ছিল বিডিকম, যে কোম্পানির দর এক মাসেরও কম সময়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর টানা কমছিল। আরও আটটি কোম্পানির দর চার শতাংশের বেশি, ১২টির দর তিন শতাংশের বেশি ও ৩৩টির দর দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিপরীতে এক দিনে যে পরিমাণ দর কমা সম্ভব, অর্থাৎ দুই শতাংশ ছুঁয়ে কমেছে প্রায় ৩০টি কোম্পানির, যা আগের দিনও ছিল ৫০টির বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০