বৈদেশিক ঋণ বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি

 

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণ শুরু করে। মূলত আজ বাংলাদেশে উন্নয়নের যে স্তরে পৌঁছেছে, সেখানে আসার পেছনে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশ হতদরিদ্র দেশ হওয়ায় বিশ্বব্যাংক অনুদানভিত্তিক ঋণ বেশি দিত। বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থার অগ্রগতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী ঋণের সুদ বাড়াতে থাকে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ যখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়, তখন থেকেই সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এখন বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণে অনুদানের অংশ কমতে থাকে। এখন বাংলাদেশের ঋণ মূলত সুদনির্ভর। এর ফলে দেনার চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি।

গত মঙ্গলবার রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে এক স্মারক বক্তৃতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো উল্লেখ করেছেন, বিদেশি ঋণে খেলাপি না হওয়ার গর্বের জায়গা শেষ হয়ে আসছে। এর উপসর্গ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত কয়েক মাস ধরে সরকার প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিদেশি দায়দেনা পরিশোধ করতে পারছে না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে আসছে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ কখনও বিদেশি দেনা পরিশোধের বিষয়ে বিলম্ব করেনি। তাছাড়া সরকারি ঋণের বাইরে নানা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েছে। সেগুলো পরিশোধও বিলম্ব (ডেফার্ড) করা হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে। এর ফলে বিদেশি দেনার স্তূপ জমা হচ্ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিজার্ভ সংকট। রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় আদমানি দায় ও বিদেশি ঋণ পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক পণ্যের আমদানি সংকুচিত করেছে। আমদানি সংকুচিত করা হলে বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। কাজেই এখন যতটা সম্ভব রিজার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে। আর চাপ কমানোর প্রধানতম উপায় হচ্ছে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা। বিশেষ করে কঠিন শর্তের ঋণ কমিয়ে আনা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এসব দ্বিপক্ষীয় ঋণ মূলক কঠিন শর্তের ঋণ। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ ও পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়া হয়েছে। এ ঋণ আর দু-এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করা শুরু হবে। এসব ঋণ আমাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ দেশে আসে। এর বিপরীতে পরিশোধ করতে হচ্ছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো। উল্লিখিত বড় ঋণগুলো পরিশোধ শুরু হলে দেখা যাবে প্রতিবছর যে পরিমাণ ঋণ আসবে সেই একই পরিমাণ ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। সরকার এ বিষয়ে সজাগ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০