বৈদেশিক ঋণ যেন গলার কাঁটা না হয়

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই ভালো হচ্ছে। বাড়ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। বাড়ছে মানুষের মাথাপিছু আয়। এছাড়া চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার পথে রয়েছে দেশ। এ অবস্থায় দ্রুতগতিতে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণও। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার সুবাদে স্বল্প সুদ বা বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখন আর বিদেশি সাহায্যনির্ভর দেশ নয়। রপ্তানি, রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, তুলনায় বিদেশি সহায়তা গ্রহণ কমেছে। এসব খবর আশাব্যঞ্জক হলেও গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ‘বৈদেশিক ঋণের চাপে পিষ্ট সরকার: ১ বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে সাড়ে ৩২ শতাংশ’ ভাবনার উদ্রেক করবে বৈকি। প্রতিবেদনের সারবত্তা হলোÑপাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৮৫.০৮ এবং পরিশোধ বেড়েছে ১১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।

কয়েক বছর ধরে তুলনামূলক কম মেয়াদি ও উচ্চ সুদের এসব ঋণের বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তা উপেক্ষা করেই বায়ার্স বা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নামে এসেছে এসব ঋণ। উন্নত দেশগুলোও একসময় শতভাগ আত্মনির্ভর ছিল না। কারও না কারও কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে এবং সে ঋণের সদ্ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে এবং উন্নত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলে আসছেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্নটি থাকায় বিদেশি ঋণে  আমাদের আগ্রহ কম। আমরা মনে করি, বড় অঙ্কের বিদেশি ঋণ যাতে দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে পারে; সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কঠিন শর্তের দ্বিপক্ষীয় ঋণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকে কঠিন করে তুলতে পারে এবং সেজন্য কী পরিমাণ মাশুল দিতে হয় দেশকে; এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে। দ্বিপক্ষীয় ঋণ সাধারণত বহুপক্ষীয় ঋণের তুলনায় কম নমনীয় হয়। এ ধরনের ঋণে সুবিধাজনক শর্ত সাধারণত বহুপক্ষীয় ঋণের চেয়ে কম থাকে। দ্বিপক্ষীয় ঋণের সুদের হার বেশি হয়, সেইসঙ্গে  গ্রস পিরিয়ডও পাওয়া যায় কম এবং এ ঋণের শর্তগুলোও আরও কঠিন হয়ে থাকে। দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতারা প্রায়ই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর শর্তারোপ করে, যার জন্য ঋণগ্রহীতাকে নির্দিষ্ট দেশ বা কোম্পানি থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হয়। অথচ বহুপক্ষীয় ঋণদাতারা সাধারণত উš§ুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেয়; ফলে ঋণগ্রহীতাও সুবিধামতো ঠিকাদার বাছাই করতে পারে। দ্বিপক্ষীয় ঋণে উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তও আরোপ করা হয়। যেমনÑভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে নির্মাণসামগ্রীর ৮৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারত থেকে।

বৈদেশিক ঋণের দায় বাড়ার কারণে ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়বে। বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ পরিশোধে যেহেতু বেশি সময় পাওয়া যায়; তাই এ ধরনের ঋণেই  গুরুত্ব দিতে হবে। বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণের ক্ষেত্রে সবকিছু স্বচ্ছ থাকে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণে সবকিছু স্বচ্ছ থাকে না। তাই আমাদের শক্তিশালী পরিশোধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০