Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:17 am

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের তথা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসন আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন তারা।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অতীতকাল থেকেই ব্রিটেন বিশ্ববাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।

তিনি দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দু’দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ়করণ, কভিড-উত্তর বাণিজ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘মার্কেট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ন এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের আরও বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন।

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ব্রিটিশ বাণিজ্য সংগঠনগুলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বিষয়ে খুব বেশি অবগত নয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে বাংলাদেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ই-কমার্স বাজার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটেনে হালাল পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশাল বাজার রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজেই এ সুযোগ গ্রহণ করে আরও বেশি হারে পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করতে পারে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ আবশ্যক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতগুলোয় ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়, যেখানে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ২০০টি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে।

মূলপ্রবন্ধে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০%। যদিও ২০১৮ সালে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১৮৬.৪৬ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড কিন্তু বাংলাদেশ এসেছে মাত্র ০.৩৭%।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধিতে তিনি বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (এসইজেড) কার্যক্রম বাস্তবায়ন, খুবই জরুরি বলে মতপ্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

নির্ধারিত আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান, ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের চেয়ারম্যান আবদুল মোক্তাদির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী এবং রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম অংশগ্রহণ করেন।