Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:22 am

বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কমেছে আমদানি ব্যয়। অন্যদিকে হোঁচট খেয়েছে রপ্তানি আয়। ফলে বাড়ছে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে ঘাটতির এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭৫ কোটি ডলার কম। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ডলার। এদিকে বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়লেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ফলে আগের অর্থবছরে থাকা চাপ অনেকটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের এসব তথ্যে পাওয়া গেছে।

বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যের ওপর বাণিজ্য ঘাটতি নির্ভর করে। মহামারির কারণে গত ছয় মাসে আমদানি-রপ্তানিতে তেমন গতি ছিল না, কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। আবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও নি¤œমুখী ছিল। এসব কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কম হয়েছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকাটা বর্তমান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক। তবে বিশ্ববাজার এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ইউরোপে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তাই ভবিষ্যৎ শঙ্কা কাটছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৮৭৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে দুই হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ ৫৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে পণ্য রপ্তানি করে আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কম আয় করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ছয় দশমিক ৮০ শতাংশ কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়েনি। তবে দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে। প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

বিমা, ভ্রমণ প্রভৃতি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ করা হয়। করোনাকালে মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানি কম হওয়ায় বিমার খরচও কমে গেছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এ

খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে তা ছিল ১৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। এই অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৫৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ কমে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চলতি হিসাবে ৪৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১৬৭ কোটি ডলার। এদিকে সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬১৫ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আলোচ্য সময়ে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৯৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।