Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:51 am

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব ফিরে আসছে প্রাচীন প্রাণঘাতী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে উদ্ভূত অগণিত সমস্যার কাতারে যোগ হয়েছে নতুন শঙ্কা। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ফিরে আসতে পারে প্রাচীন প্রাণঘাতী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া, যা কি না আধুনিক মানুষের কোষীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে একেবারে নতুন। তাই এহেন আশঙ্কা সত্য হলে তা হতে পারে বিপর্যয়ের কারণ।

পৃথিবীর দুই মেরুসহ সাইবেরীয় অঞ্চলে যে পারমাফ্রস্টবা ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত মাটি রয়েছে তাতে লুকিয়ে থাকতে পারে লাখ লাখ বছর আগের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। কেননা ভীষণ ঠাণ্ডা, অক্সিজেনবিহীন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন এসব মাটিতে অণুজীবগুলো জীবিত থাকতে পারে কয়েক লাখ বছর পর্যন্ত। স্বাভাবিক অবস্থায় গ্রীষ্মকালে এই পারমাফ্রস্টগুলো ৫০ সেমি গভীর পর্যন্ত গলে যায়। কিন্তু পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এসব এলাকায় পৃথিবীর অন্য অংশের চেয়ে তিন গুণ বেশি হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি অপেক্ষাকৃত পুরোনো পারমাফ্রস্টগুলোও গলতে শুরু করেছে, যা অবমুক্ত করতে পারে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া।

এই প্রাচীন অণুজীবগুলো ফিরে আসার একটি সাম্প্রতিক ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে। ফ্রেঞ্চ ও রাশিয়ার একদল বিজ্ঞানী ৩০ হাজার বছরের পুরোনো একটি হিমায়িত শিলাখণ্ড থেকে দুই প্রজাতির জায়ান্ট বা দৈত্যাকার ব্যাকটেরিয়া উদ্ধার করে, যেগুলো স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া অপেক্ষা তিন থেকে ১০ গুণ বড় ছিল। শঙ্কার বিষয় হলো, তখন পর্যন্ত এদের মধ্যে সংক্রমণ করার বৈশিষ্ট্যগুলো অক্ষুণœ ছিল।

আরও একটি ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের আগস্টে সুমেরু বৃত্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইয়ামাল উপদ্বীপে। তখন পশুর অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ বছরের একটি ছেলে মৃত্যুবরণ করে এবং আরো ২০ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। ধারণা করা হয়, ৭৫ বছর আগে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত একটি মৃতবল্গা হরিণ ওই অঞ্চলে চাপা পড়ে থাকে। ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যখন ৩৫ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড পর্যন্ত উঠে যায়, তখন পারমাফ্রস্ট গলে বল্গাহরিণটির মৃতদেহ পানির সংস্পর্শে আসে। এই পানি থেকে জীবাণু পড়ে মাটিতে এবং খাদ্য চেইনে প্রবেশ করে। তখন ওই এলাকার দুই হাজারটি বল্গা হরিণ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়, যেখান থেকে কিছু মানুষও সংক্রমিত হয়।

চিন্তার বিষয় হচ্ছে, শত শত বছর ধরে এসব এলাকায় মহামারি সৃষ্টিকারী অণুজীবে আক্রান্ত মানুষ ও পশু সমাধিস্থ হয়েছে। তাই এসব হিমায়িত মাটির স্তরে সেইসব অণুজীবের সুপ্ত অবস্থায় থাকাটা অসম্ভব নয়, যারা অতীতে মহামারি সৃষ্টি করেছিল। উদাহরণস্বরূপ স্প্যানিস ফ্লু ভাইরাসের বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯১৮ সালে বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং পাঁচ থেকে ১০ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল, অর্থাৎ বিশ্বের তিন থেকে পাঁচ ভাগ মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আলাস্কার তুন্দ্রা অঞ্চলে অবস্থিত একটি গণকবরের উত্তোলিত মৃতদেহ থেকে ওই ভাইরাসের আরএনএ উদ্ধার করেছেন, যা থেকে ওই ভাইরাস আবার সৃষ্টি হতে পারে। এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। তাই কয়েকজন বিজ্ঞানী মনে করেন, পৃথিবী কোনো বিশেষ ভাইরাস থেকে মুক্ত এমনটি ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে বরং যেকোনো সময় যেকোনো প্রাণঘাতী অণুজীবের মোকাবিলা করতে পারার সক্ষমতা অর্জনের দিকে আমাদের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।

 

জুঁই ইয়াসমিন