Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:30 pm

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম ১০ বছরে সর্বোচ্চ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কর্মী ও সরবরাহ সংকটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত টানা তৃতীয় মাসের মতো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। শুধু অক্টোবরেই আগের মাসের তুলনায় বৈশ্বিক খাদ্যের দাম তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০১১ সালের জুলাই থেকে গত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসিক ফুড প্রাইস ইনডেক্সে (এফএফপিআই) এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, ব্ল–মবার্গ।

এফএও সংস্থা বলছে, অক্টোবরে গড়ে বৈশ্বিক মূল্যসূচক ছিল ১৩৩ দশমিক দুই পয়েন্ট, যা আগের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৯ দশমিক দুই পয়েন্ট। ২০১১ সালের জুলাইয়ের পর পণ্যের দাম আর এতটা বাড়েনি।

এফএও-র প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী সব ধরনের খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। গত মাসের চেয়ে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে তিন দশমিক দুই শতাংশ, যা গত এক বছর আগের তুলনায় ২২ দশমিক চার শতাংশ বেশি। অক্টোবরে টানা চতুর্থ মাসে গমের দাম বেড়েছে পাঁচ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালের নভেম্বরে গমের দাম বেড়েছিল।

বিশ্ববাজারে প্রধান রপ্তানিকারকদের ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। বিশেষ করে কানাডা, রাশিয়ান ফেডারেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফসল হ্রাসের কারণে বিশেষ করে গম উৎপাদন কমে যায়। কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের ফলন তুলনামূলকভাবে কমছে। ফলে তারা রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে। এছাড়া ইরান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গম উৎপাদন অনেক কমেছে।

এফএও বলছে, অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে ৯ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে। কর্মী সংকটের কারণে মালয়েশিয়ায় পাম উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভোজ্যতেলের দামে প্রভাব পড়ে। অক্টোবরে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে এক দশমিক আট শতাংশ, যা গত ছয় মাসে টানা বৃদ্ধি।

রোমভিত্তিক সংস্থা এফএও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০২১ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই দশমিক ৭৯৩ বিলিয়ন টন কম ধরেছে, যা এক মাস আগেও ধরা হয়েছিল দুই দশমিক ৮০০ বিলিয়ন টন।

জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়ার শঙ্কা: এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকা জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডের অনুরোধে সারা না দিয়ে জ্বালানি তেল উত্তোলন না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেক ও ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো। ফলে চলমান মূল্য বৃদ্ধি আরও বাড়বে।

এদিকে বৃহস্পতিবারের ওপেক প্লাসের বৈঠকের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরবের শীর্ষ তেল পরিশোধন ও রপ্তানিকারক কোম্পানি আরমকো। স্থানীয় সময় শনিবার আরমকো তার এশীয় গ্রাহক দেশগুলোর জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যারেলপ্রতি ১.৪০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২.৭০ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। 

চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সামঞ্জস্য না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্র্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম সাত বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। তেলের দামে ভারসাম্য আনতে বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এবং তাদের সহযোগী দেশগুলোকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারপরও গত বৃস্পতিবারের বৈঠকে ওই দেশগুলো নিজেদের আগের অবস্থানে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে তেলের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের দিকে ঝুঁকছে।

আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনে চার লাখ ব্যারেল করে উৎপাদন বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ওপেক। এ পরিমাণ বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ফলে বিশ্ববাজারে এখনই তেলের দাম দ্রুত কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।