শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো অগ্রগতিশীল অর্থনীতির দেশে মধ্যবিত্তের দুর্বল (কম) মজুরি, প্রবৃদ্ধি ও আয়বৈষম্য বাড়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি লক্ষ করা গেছে। গত সোমবার আইএমএফের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাও ঝিয়াং বলেন, আগামী মাসে প্রকাশিতব্য বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্বাভাসে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে সামান্যই পরিবর্তন হতে পারে, যেখানে তুলনামূলকভাবে ধীর গতির প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। খবর এএফপি।
ঝিয়াং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও’তে ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটের প্রায় এক দশক পরে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভালো হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এক দশক আগে ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা দেখা দেয়। ওই সময়কে বিশ্ব অর্থনীতির সংকট বলা হয়। এর আগে ১৯৩০ সালে বিশ্বমন্দা দেখা দিয়েছিল।
আইএমএফ তাদের জুলাইয়ের পূর্বাভাসে চলতি বছরের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের তিন দশমিক দুই শতাংশ থেকে বেড়ে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছিল, যা ২০১৮ সালে তিন দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়। আর প্রবৃদ্ধির হার তিন দশমিক পাঁচ শতাংশকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ‘ভালো সংবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়।
আইএমএফের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ধীর উৎপাদন হার, আয়বৈষম্য, নি¤œমানের শ্রম মজুরি বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি গত বছরের এক দশমিক ছয় শতাংশ থেকে আগামী বছর দুই দশমিক এক শতাংশ হবে বলে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের পর তার দেশের প্রবৃদ্ধিকে তিন শতাংশে নিয়ে যেতে ঘোষণা দেন। আইএমএফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে উচ্চভিলাষী বলে অভিহিত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও অর্ধেকের বেশি পরিবার রয়েছে নিম্নআয়ের। আর দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির, যাদের আয়ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চবিত্তের অর্ধেকের কম।
তাও ঝিয়াং বলেন, গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর দেওয়া হ্রাস পেয়েছে। ফলে সর্বোপরি এসব আয়বৈষম্য ও বৈশ্বিক ভোগ নি¤œগতির। পশ্চিমা বিশ্বের এসব বৈষম্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলতাবাদ বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে তার দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে রক্ষণশীলতাবাদ নীতি মেনে চলার ঘোষণা দেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য সুখকর নয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
ঝিয়াং মনে করেন, পরিবারে আয় বাড়াতে হলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর আরও সচেতন হতে হবে। তার পরামর্শ হলো, এজন্য সামাজিক সহায়ক কর্মসূচিকে লক্ষ করা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান উভয় বৃদ্ধি করা, উচ্চমজুরির ব্যবস্থা করা, দরিদ্র পরিবারের শিশু কেয়ারের জোগান বাড়ানো, যাতে বড় করদাতারা গরিবদের সহায়তা করতে পারেন।
আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে গত সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ টেক্স সংস্কারের জন্য নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে।