বৈষম্যবিরোধী আইন অন্তর্ভুক্তিমূলক হোক

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বৈষম্যবিরোধী বিল, ২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটি নানা দোষে দুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সংগঠন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বিলটিতে ভাষাগত নানা ত্রুটি থাকার পাশাপাশি অনেক বিষয়ের সংজ্ঞা ও অনেক ব্যাখ্যা অস্পষ্ট বলে দাবি করছেন তারা। তাই বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে এর যৌক্তিক পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম রোববার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিলটির নানা বিষয় সংস্কার করার দাবি তোলেন। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সংস্কার ব্যতিরেকে প্রস্তাবিত আইন সংসদে অনুমোদিত হলে বৈষম্যের বিষয়টি আইনি ভিত্তি পেয়ে যাবে।

বৈষম্যবিরোধী আইনে পাস হলে বৈষম্য আইনি ভিত্তি পাবেÑএটি প্রত্যাশিত নয়। নাগরিক প্ল্যাটফর্মও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আইনটিকে সবার জন্য হিতকর করতে এটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মতামত নিতে হবে।

সংবিধানের মৌলিক ধারাগুলোর ওপর ভিত্তি করে আইনটি উত্থাপন করা হলেও এটির অধিকতর যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। একবার আইন পাস হয়ে গেলে সেটি বাতিল করাও সময়সাপেক্ষ। যেহেতু নাগরিক প্ল্যাটফর্ম দাবি করেছে, বিলটি অসম্পূর্ণ; তাই যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

প্রস্তাবিত বিলের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, বৈষম্য সৃষ্টিকারীর জন্য সুস্পষ্টভাবে কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। আইনে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও যেখানে দোষীদের নিবৃত্ত করা ও অপরাধ কমানো দুঃসাধ্য, যেখানে শাস্তির বিধান না করে কীভাবে বৈষম্য সৃষ্টিকারীকে নিবৃত্ত করা যাবে। তাই বলা যায়, প্রস্তাবিত বিল বৈষম্য দূরীকরণে তেমন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না।

সামগ্রিকভাবে একটি আইনের মাধ্যমে সব ধরনের বৈষম্যকে কেন্দ্রীভূত করার প্রচেষ্টা অবশ্য প্রশংসনীয়। তবে আইনে বৈষম্যের সংজ্ঞায় যেসব অস্পষ্টতা ও অসঙ্গতি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। রাষ্ট্রের অনেক আইনেই বৈষম্যমূলক ধারা রয়েছে। এগুলো নিয়ে রাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজ থেকে অভিযোগ দায়ের করার আগেই ক্ষতিগ্রস্তের জন্য রাষ্ট্রকে নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উদ্যোগী হতে হবে। সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবে অনেকে পারিবারিক বঞ্চনার কথা সামনে আনেন না। বঞ্চনা কষ্ট পুষে রেখে ভুক্তভোগী নানা শারীরিক জটিলতায়ও ভোগেন। এর প্রতিকারে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।

উত্থাপিত বিলে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলোচনাকারীরা অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষেই অবস্থান নেন। যেমন পৈতৃক সম্পত্তির বাটোয়ারার ক্ষেত্রে দখলদারের পক্ষেই থাকেন সালিশকারীরা। তাই ‘আলোচনার মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া’ নিশ্চিত করা যাবে না। এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। শেষ বিচারের আইনি ব্যবস্থা নিলে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার ভূমির আইনগত মালিকানার কথা বলা হলেও, প্রথাগতভাবে ভূমি মালিকদের বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যাপারে কিছু উল্লেখ থাকাই বৈষম্যমূলক। আইনে সব ধরেনের বৈষম্যের শিকার ব্যক্তি সুরক্ষা পেতে রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে সব জাতিগোষ্ঠীর, শ্রেণি-পেশার মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০