নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, সুশাসন অর্জন, নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়াসহ মোটা দাগে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০টি করণীয় বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন এশিয়ান গ্রোথ ইনস্টিটিউটের (এজিআই) সম্মাননীয় অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে কাক্সিক্ষত মাত্রার থেকে বেশি। আমরা ধীরে ধীরে উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি। সেই লক্ষ্যে আমাদের মোটাদাগে ১০টি চ্যালেঞ্জের ওপর জোর দিতে হবে। সেজন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ১০ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তার মতে, ভবিষ্যতের করণীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, সুশাসন অর্জন, গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন ও আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, গ্রাম পরিষদ গঠন, ভৌগোলিক বৈষম্যের অবসান, সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি, নারী-শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া, সর্বজনীন সামরিক শিক্ষা প্রবর্তন, সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসরণ।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে ধারায় যাচ্ছি, যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে বৈষম্যপূর্ণ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলÑআমরা কিন্তু তাদের দলে চলে যাচ্ছি। তাদের লিগে চলে গেলে ফাঁদে পড়ে যাব। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের যে ভিশন, সেই ভিশন মোটেই বাস্তবায়িত হবে না। বৈষম্য বেশি হলে দেশ এগোতে পারে না, তার একটি কারণ হলো বৈষম্য ফাঁদ সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়লে সেটা রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের এই পর্বে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের ওপর নজর দিতে হবে। আর এসব চ্যালেঞ্জ একটি অপরটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের জন্য প্রয়োজন সুশাসন, আবার সুশাসন অর্জন হবে যদি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পায়। অন্যদিকে সুশাসন ও সামাজিক সংহতির জন্য প্রয়োজন আনুপাতিক নির্বাচন। আবার দেশের সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন সামাজিক সংহতি। সুতারাং একটিকে ছাড়া আরেকটি লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, আজকের আলোচনার অনেকগুলো বিষয় ফুটে উঠেছে, সমস্যার কথা এসেছে। তবে আমাদের শুধু সমস্যা নিয়ে ভাবলে হবে না, এর সমাধানের পথ বের করতে হবে। ভাবতে হবে কীভাবে বৈষম্য কমিয়ে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন করা যায়।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, আমাদের দেশে উন্নয়ন হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে এই উন্নয়নে বৈষম্যও হয়েছে। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য বৈষম্যের হ্রাস করা, সামগ্রিক উন্নয়ন করা। পাশপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এর বিকল্প নেই আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য।
এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, বাংলাদেশের এখন উন্নয়নের সঙ্গে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈষম্য। এই বৈষম্য যে শুধু আয়ে হয়েছে তা নয়; ভোগে, সম্পদেও এখন বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।
এ সময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্র এখন একটি গুরুতর অবিচার বিরাজ করছে, যা সমাজকে আরও অনেক আর্থ-সামাজিক সমস্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত (সমস্যা) অত্যন্ত অন্যায় সমাজের লক্ষণগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, অন্যায় ও অসমতা পরিবেশ, শিক্ষা, এমনকি সুশাসন এবং বিকেন্দ্রীকরণের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও বিআইডিএস গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল।