Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:27 am

বোনাসের দাবিতে ভারতের দার্জিলিংয়ে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট

*দৈনিক মজুরি নিয়ে অসন্তোষ

*অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। গত দেড় বছরে কিছু চা বাগান কার্যক্রমে ফিরলেও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করেনি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতের দার্জিলিং পাহাড় এবং ডুয়ার্সের চা শ্রমিকরা গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল প্রায় প্রতিটি চা বাগানে। মালিকপক্ষ এবং ইউনিয়নের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলেও জট কাটেনি। শেষ পর্যন্ত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সরকারের তরফে ১৬ শতাংশ বোনাস দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এরপর ডুয়ার্সের চা বাগানগুলোর কর্মবিরতি উঠলেও পাহাড়ের প্রায় ১৫টি চা বাগানে এখনো ধর্মঘট চলছে। তাদের দাবি, ২০ শতাংশ বোনাস না পাওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।

ওদিকে ভারত সরকার ১৬ শতাংশ বোনাস মঞ্জুর করলেও পাহাড়ের প্রায় ১৫টি চা বাগানের শ্রমিক তা এখনও মানতে নারাজ। দার্জিলিং চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গৌতম মণ্ডল জানিয়েছেন, পাহাড়ের বেশ কয়েকটি বাগানে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলাদা করে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কোনো কোনো বাগান সরকারের বেঁধে দেয়া ১৬ শতাংশ বোনাসের বেশিই শ্রমিকদের দেয়ার কথা বলেছেন। যে কারণে আপস মীমাংসার মাধ্যমে ধর্মঘট উঠেছে। কিন্তু বেশ কিছু বাগানে এখনো জট কাটেনি। আলোচনা চলছে।
পাহাড়ের চা বাগানে আন্দোলনরত ইউনিয়নগুলোর অন্যতম নেতা বিএম রাই জানিয়েছেন, ২০ শতাংশ বোনাস না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে ফিরবেন না। এটা তাদের অধিকার। বস্তুত, উৎসবের মরসুমে বোনাস দেয়ার রীতি রয়েছে চা বাগানগুলোয়। চলতি বছর সেই বোনাস নিয়েই মালিকপক্ষের সঙ্গে বিতর্ক শুরু হয় শ্রমিকদের। তার জেরে শুরু হয় আন্দোলন।

দার্জিলিং এবং ডুয়ার্স অঞ্চলের চা বাগান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা চলছে। মাঝে অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। গত দেড় বছরে বেশ কিছু চা বাগান নতুন করে খুলেছে। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, হাত বদল হয়ে চা বাগান খুললেও তাদের পুরনো বকেয়া এখনও পুরোপুরি মেটানো হয়নি। অনেক শ্রমিক তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটির টাকা পাননি। অভিযোগ রয়েছে, মৃত্যুর পরেও তাদের ব্যাংকে সেই টাকা ঢোকেনি। এনিয়ে একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছেন চা শ্রমিকরা।

শুধু তা-ই নয়, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। বছরদুয়েক আগে সরকার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির কথা বললেও তা যথেষ্ট নয় বলে শ্রমিকদের দাবি। উত্তরবঙ্গের বাগানে এখন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেয়া হয় ২৫০ রুপি। কোনো বাগান এর চেয়ে বেশি মজুরি দেয়। চা শ্রমিকদের বক্তব্য, অন্যান্য ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম অর্থ দেয়া হয় চা তাদের। যদিও মালিকপক্ষের দাবি, যেহেতু চা শ্রমিকদের থাকার ঘর, স্কুল এবং মেডিক্যাল সুবিধা দেওয়া হয়, তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সঙ্গে চা শ্রমিকদের গুলিয়ে ফেললে চলবে না। চলতি বছরে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়েও একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

চা মালিকদের একটি বড় অংশের দাবি, চা বিক্রি করে যথেষ্ট লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা। বিশাল চা বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে চা বাগান চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে গত এক দশকে একের পর এক বাগান বন্ধ হয়েছে বলে তাদের দাবি। চা মালিকদের আরও অভিযোগ, এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চায়ের উৎপাদন ভালো হয়নি। মূলত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও চায়ের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে তাদের দাবি এবং সে কারণেই ২০ শতাংশ বোনাস তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চা মালিকরা। সবাই চেষ্টা করছেন শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে আপস মীমাংসার রাস্তায় যেতে।

উল্লেখ্য, দার্জিলিং পাহাড়ের চা বিশ্বখ্যাত হলেও পরিমাণে অনেক বেশি চা তৈরি হয় ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে। দিগন্ত বিস্তৃত সেই চা শিল্প চরম সংকটের মুখোমুখি।