বোনাস বেশি দেওয়ার খেসারত দিতে হবে ১৪ কোম্পানিকে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: আগে পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ কোম্পানিই বোনাস শেয়ার দিয়ে পার পেয়ে যেতেন। আইন না থাকায় ছিল না কোনো জবাবদিহি। মূলত এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো কারণে-অকারণে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করত। কিন্তু নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় এ সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু বোনাস শেয়ার কিংবা নগদের চেয়ে বোনাস বেশি দিলেই জরিমানা হিসেবে দিতে হতো ট্যাক্স। নিয়ম চালুর প্রথম বছরেই এই আইনের ফাঁদে পড়েছে ১৪ কোম্পানি।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে। একইভাবে যারা কোনো নগদ না দিয়ে শুধু বোনাস লভ্যাংশ দেবে তাদেরও সমহারে ট্যাক্স দিতে হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা ৫টি। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑকাট্টলী টেক্সটাইল, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ন্যাশনাল ফিড, সোনালি পেপার ও এসিআই।

পক্ষান্তরে ৯টি কোম্পানির পর্ষদ পুরোটাই বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। এগুলো হচ্ছেÑনূরানী ডাইং, ড্রাগন সোয়েটার, ইভিন্স টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস, অ্যাডভেন্ড ফার্মা, ন্যাশনাল ফিড, দেশ গার্মেন্টেস, ওয়াইম্যাক্স, স্টাইল ক্রাফট এবং  প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যে কারণে নিয়ম অনুযায়ী এ কোম্পানিগুলোকে বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ট্যাক্স বা জরিমানা দিতে হবে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে মোট ১১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরিমানা গুনতে হবে বস্ত্র খাতের ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং মিলসকে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

এদিকে বেশি বেশি বোনাস শেয়ার দেওয়ার জন্য মন্দা ব্যবসাকে দায়ী করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, করোনার কারণে তারা এবার অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে নগদ অর্থ নেই। অন্যদিকে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের ক্যাটেগরির টিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতা। যে কারণে বাধ্য হয়েই তারা বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্ত্র খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের সচিব শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়েই বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি। কারণ করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। যে কারণে নগদ অর্থের সংকট রয়েছে। ফলে বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এর ওপর আমাদের কর দিতে হবে। এই কর দিতে আমাদের যে অর্থ খরচ হবে নগদ লভ্যাংশ দিতে গেলে এর চেয়ে বেশি অর্থ খরচ হতো। তাই সুযোগ ছিল না আমাদের।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীরা বোনাসের চেয়ে নগদ লভ্যাংশ বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে দুর্বল কোম্পানির বোনাস শেয়ার নিতে চান না শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ এতে ওই কোম্পানির শেয়ার বেড়ে যায়। আর শেয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন এর দরও কমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের লাভের বদলে ক্ষতির শঙ্কাই বেশি থাকে। এ বছর হয়তো করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কোম্পানি বোনাস শেয়ার দিয়েছেন। আশা করছি, ধীরে ধীরে এটা ঠিক হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, যারা এমন করছে এমন সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বোনাস শেয়ারকে নগদে রূপান্তরের মাধ্যমে শাস্তি এড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কোনো কোম্পানি যদি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভার দিন বোনাস প্রত্যাহার করে নিয়ে নগদ লভ্যাংশ দেয় তাহলে তাদের কোনো শাস্তি ভোগ করতে হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০