Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:30 pm

বোরো ও আলুর ফলনে ক্ষতির শঙ্কা

জাকারিয়া পলাশ : এবার শীতের প্রকোপ বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু দেরিতেই। তবে হঠাৎই তাপমাত্রা কমে গেছে রেকর্ড পরিমাণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আরও অন্তত দুই-তিন দিন তীব্র শীতে ভুগবে দেশ। আর দেরিতে আসা অস্বাভাবিক শীতের কারণে চলতি মৌসুমের বোরো ধান ও আলুর ফলনে ক্ষতির শঙ্কা করছেন কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেশে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। দেশের উত্তরের শেষ প্রান্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সর্বনি¤œ এ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হতো। পাহাড়ি ওই এলাকায় ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতরের কাছে তা ছিল বাংলাদেশে সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ড।

গতকাল সোমবারও সারা দেশে ব্যাপক শীত অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গতকাল দেশের দ্বিতীয় সর্বনি¤œ ছিল তাপমাত্রা ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই জেলার ডিমলায় ছিল ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

শীতের এ তীব্রতা ও অত্যধিক কুয়াশার কারণে চলতি মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) শস্য বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘স্বল্প তাপমাত্রা কিছু কিছু ফসলের জন্য ভালো। ফুলকপি বা বাঁধাকপির মতো সবজির জন্য তাপমাত্রা কম হওয়া কোনো সমস্যা নয়। শস্য হিসেবে গমের জন্যও অতিরিক্ত ঠাণ্ডা সুবিধাজনক। কিন্তু ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা হলে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা যদি এক সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে ধানের গাছ মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা এরই মধ্যে বোরো ধান রোপণ করে ফেলেছেন। এখন সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমি পতিত থাকার বা পুনঃবপনের জন্য চারার ঘাটতি পড়তে পারে। এছাড়া শীতের তীব্রতায় ভুট্টার উৎপাদনে তেমন ক্ষতি না হলেও ভুট্টার গাছের জীবনকাল বেড়ে যাবে।’

বিলম্বে শীত আসার কারণে বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে এ কৃষিবিদ বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছিল, ডিসেম্বরের শেষ দিকে শীত আসবে। সে সময় আসলে এতটা ঝুঁকি থাকত না। কারণ কৃষকরা অনেকেই জানুয়ারির আগে বোরো চারা রোপণ শুরু করেন না। কিন্তু এখন অনেকেই বোরো ধান রোপণ করে ফেলেছেন।’ এদিকে কুয়াশার কারণে আলু ও টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলে নানা রোগের উপদ্রব বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

সূত্রমতে, টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীতে এখানে গতকাল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আরও দু-এক দিন এ শৈত্যপ্রবাহ থাকবে বলে জানানো হয়েছে সরকারি পূর্বাভাসে। ১০ জানুয়ারির পর সারা দেশে তাপমাত্রা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি বা এর কম হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, গত বছর দুটি বন্যার কারণে বোরো ও আমন উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হয়। এতে ছয় বছরের মধ্যে চালের উৎপাদন সর্বনি¤œ স্তরে পৌঁছায়। তারপর এবার অতিরিক্ত শীতের কারণে নতুন মৌসুমের বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা খাদ্য নিরাপত্তায় ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। ফলে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আলুচাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে আলুর ফলন বেশি হওয়ায় প্রায় ১৫ লাখ টন আলু মজুত রয়ে গেছে। ওইসব আলু বিক্রি না হওয়ায় ওই মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয় কৃষক ও হিমাগার শিল্পের সংশ্লিষ্টদের। এর ফলে এবার এমনিতেই আলুর চাষ কম হয়েছে। তারওপর শীতের কারণে আলুতে রোগবালাই দেখা দিয়ে মৌসুম শেষে খাবার আলুর ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।