বোর্ড বদলালেও কার্যক্রম আগের মতোই থাকবে: ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে বড় পরিবর্তন এলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম আগের মতোই থাকবে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাতেই থাকছে ব্যাংকটি। এক্ষেত্রে শরিয়াহ আইন আগের চেয়েও কঠোরভাবে পরিপালন করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।

গতকাল রোববার মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আরাস্তু খান বলেন, গত ৫ তারিখ ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। এটা শুধু ম্যানেজমেন্ট চেইঞ্জের একটি বিষয়। ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ব্যাংকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম যেভাবে চলছিল, সেভাবেই চলবে। কারণ এটা কোনো ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন নয়। ইসলামী ব্যাংকের আমানত গ্রহণ, অর্থায়ন সেবা ও বিনিয়োগসহ সব কার্যক্রম শরিয়াহ মোতাবেক সুদবিহীন এবং লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে শরিয়াহ আইন আগের চেয়েও কঠোরভাবে মেনে চলা হবে’ বলে জানান তিনি।

‘ইসলামী ব্যাংকের টাকা জামায়াতে ইসলামী এবং জঙ্গি সংগঠনের পেছনে ব্যয় করার যে অভিযোগ ছিল, তা কীভাবে দেখছে নতুন পর্ষদ’ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের সব খরচের হিসাবই ঠিকঠাক রয়েছে। ব্যাংকটির যেহেতু অনেক লাভ হয়, তাই এদের সিএসআর খাতে ব্যয়টাও বেশি। এই ব্যয় নিয়েই অনেক সন্দেহ ছিল। আসলে সে রকম কিছু পাওয়া যায়নি। এখন থেকে চোখ বন্ধ করে এ টাকা অনুপযুক্ত জায়গায় ব্যবহার করা চলবে না। এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’

তবে ‘ব্যাংকটির কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অরাজকতামূলক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলে একজন কর্মকর্তাকেও চাকরিচ্যুত করা হবে না’ বলে জানান আরাস্তু খান। তিনি বলেন, ‘এখানকার একেকজন কর্মকর্তা অনেক কম টাকায় চাকরি করেন। এসব মেধাবী কর্মকর্তা ব্যাংকের জন্য সত্যিকার অর্থেই নিবেদিত। তাই এদের সরানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না। বরং কর্মকর্তাদের সব লেভেলে প্রমোশন দেওয়া হবে, বেতন বাড়ানো হবে। আগে যে কয়টা বোনাস দেওয়া হতো, এবারও তা-ই দেওয়া হবে। সবাই খুব সিকিউরড। তবে আগে যেটা ছিল শুধু একটা ধর্মীয় দিক বিবেচনায় নিয়ে এখানে চাকরি দেওয়া হতো, সেটা আর থাকছে না। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে সবাই এখানে চাকরি করতে পারবে। সে হিন্দু বা খ্রিস্টান যে-ই হোক না কেন।’

আরাস্তু খান আরমাডা স্পিনিং মিলস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডে এসেছেন। তবে এ প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বিস্তারিত এবং ইসলামী ব্যাংকে তার কত শতাংশ শেয়ার রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরিষ্কারভাবে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ‘ব্যাংকটি তার সিএসআর থেকে ৮০-৮৫ কোটি টাকা প্রতিবছর ব্যয় করতো। এক্ষেত্রে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কিছু খুঁজে পাইনি। তবে এসব টাকা আরও অ্যাপ্রোপ্রিয়েট জায়গায় খরচ করা হবে।’

প্রায় আট মাস ধরে ব্যাংকটির পর্ষদে কাজের অভিজ্ঞতা বর্র্ণনা করেন ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে লেবাসী পার্টটা বেশি ছিল। ইসলাম বেচাকেনা করার একটা প্রবণতা ছিল। কোনো দখল নয়, সেটা থেকে ব্যাংকটিকে বের করে আনা হবে।’ আগে বোর্ডে যারা ছিলেন, তাদের প্রশংসা করেন তিনি।

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের ৪২ শতাংশ এসএমই, ৩০ শতাংশ বড় ঋণ এবং গরিবদের মাঝে মাত্র ৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয় উল্লেখ করেন আহসানুল আলম। তিনি বলেন, গরিবদের মাঝে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ১০ লাখ নতুন নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি মেগা প্রজেক্টগুলোতে আমরা বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছি।

মালিকানায় এস আলম গ্রুপের কোনো শেয়ার রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এস আলম গ্রুপের নামে কোনো শেয়ার এখানে নেই।’

তাহলে রোববার সকালে এই গ্রুপের কর্ণধার কেন ব্যাংকটিতে এসেছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজ (রোববার) আমাদের পর্ষদকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। এর থেকে বেশি কিছু নয়।’

‘এমডির বিষয়টি পদত্যাগ না অপসারণ’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমডি আমাদের শারীরিক সমস্যার কথা বলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।’

তবে ‘পর্ষদের এই বড় পরিবর্তন সরকারের ইচ্ছাতেই হয়েছে কি না’ জানতে চাইলে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন বলেন, ‘এখানে সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই। এখানে পর্ষদ যোগ্য মনে করে  চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে।’

তবে আহসানুল আলম বলেন, ‘আমার জানামতে বেসরকারি ব্যাংকে সরকার কোনো নিয়োগ দিতে পারে না। তবে আগে এ ব্যাংকে বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন। মীর কাসেম আলী ছিলেন। তবে আপনারা সবাই জানেন ইসার আমলে ইসা, আর মুসার আমলে মুসা।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পিপিএম, পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল আলম ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলমসহ ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০