শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন ব্যক্তির নিজের স্বার্থের ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, এজন্য একজন সচিবকে অন্যায়ভাবে জেল খাটতে হয়েছে এবং একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। খবর বাসস।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকশেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত লাগায় পদ্মা সেতু প্রকল্প আটকে যাচ্ছিল। সময়মতো কাজ শুরু হলে ২০১৬ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হতো। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন ৮ শতাংশে পৌঁছে যেতো।’
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ যড়যন্ত্রের পেছনে দেশের কারা জড়িত ছিল, তাদের নাম একদিন বের হয়ে আসবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেন।
রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব?্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।
দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে তদন্তের পর জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের প্রতি মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল। তাদের এই মিথ্যা অভিযোগে আমাদের একটা সচিবকে অযথা একটা বছর জেল খাটতে হয়। এর থেকে আর লজ্জাজনক কিছু নেই।
দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেন আদালত।