ব্যক্তি ও করপোরেট করের বোঝা কমানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যক্তি ও করপোরেটের ওপর করের বোঝা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংস্থা ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। গতকাল বুধবার আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংগঠনটির সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে মূল প্রeন্ধ উপস্থাপন করেন ফিকির কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া

সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের ব্যবসা খাত ও এর কর্মচারীদের ওপর এর প্রভাব রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। অন্যদিকে খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২০-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানায় যে, ফিকি আশা করেছিল নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ (৮ গুণ বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ইতোমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ সুদের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি+ভ্যাট) ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দিতে হয়। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে পণ্যের ভোগ রুমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে; যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ দিতে সরকারকে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয়ে জানান যে, ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের ওপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ,  প্রভৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তারা আরও বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিকি’র পর্যালোচনা অনুসারে, এটি কোম্পানির ওপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তী সময় কর্মচারীদের উপার্জনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশি ঋণের সুদের ওপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুনমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।

তারা বলেন, করপোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করা দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে, কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া; যেন পরবর্তী ৫ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট এবং খসড়া আয়কর আইন ২০২৩ -এর বিষয়ে ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে, কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি যে সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে কর-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ফিকি থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০