জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: শুরু হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ ধাপে করহার ২৫ শতাংশই থাকছে, যদিও অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবে এটি ৩০ শতাংশ করার কথা বলেছিলেন। তবে বেশি আয় যারা করছেন, তারা আয়করের এক বছর ছাড় পাবেন। পরের ২০২৫-২৬ করবর্ষ থেকে সর্বোচ্চ করধাপ ৩০ শতাংশই হবে। গতকাল শনিবার এ সংশোধন গ্রহণ করে জাতীয় সংসদে ‘অর্থ বিল ২০২৪’ পাস হয়েছে। এতে করভার লাঘবে এ পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ আর অর্থনীতির বাস্তবতায় নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি থাকলেও তাতে সাড়া দেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে কর ধাপে পরিবর্তন এনে তিনি মধ্যম সারির করদাতাদের কিছুটা ছাড় দিয়েছেন।
অর্থ আইন অনুযায়ী, সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। পরবর্তী এক লাখ টাকা আয়ে কর দিতে হবে পাঁচ শতাংশ হারে। আগে সাড়ে চার লাখ টাকা পরবর্তী তিন লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেয়া লাগত। এখন সাড়ে চার লাখ টাকা পরবর্তী চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ওই হারে কর দিতে হবে। পরের ধাপে সাড়ে আট লাখ টাকা পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার আয়ের জন্য কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। এখন সাড়ে সাত লাখ টাকা পরবর্তী চার লাখ টাকার ওপরে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী সাড়ে ১১ লাখ টাকা পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এবার সাড়ে ১৩ লাখ টাকা পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য আয়কর দিতে হবে ২০ শতাংশ হারে। এরপর সাড়ে ১৮ লাখ পরবর্তী অবশিষ্ট যে কোনো পরিমাণ আয়ের ওপর কর দিতে হবে ২৫ শতাংশ হারে।
অপরদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থেকে সরেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই শুল্কারোপের কথা বলেছিলেন। পরে ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, কর অবকাশ সুবিধার কথা জেনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এসেছে। এই এক শতাংশ শুল্কারোপ সেই বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। বিরোধী দলগুলোও এই শুল্ক প্রস্তাবের সমালোচনা করে আসছিল। গতকাল শনিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ সমীচীন নয়। আমি অর্থমন্ত্রীর কাছে আগের মতো মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক শূন্য শতাংশে রাখতে বিবেচনার অনুরোধ করছি।’
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কালোটাকা সাদা টাকা নয়। এখন
সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে, সেই কয়েক কোটি টাকার মালিক, ঢাকা শহরে এক কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারেন না। সেটা তারা আয়কর দিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল ইসে ফিরে আসে, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এই ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে, সেজন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়।
অতীতে খালেদা জিয়াও এই সুযোগ নিয়েছিলেন বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরও অনেকে নিয়েছিলেন। তারাও কিন্তু এরকমভাবে সেই ২০০৭-২০০৮ বা তার পরবর্তী সময়ে এভাবে কিন্তু তারা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন। মনে হয়, একটু খোঁজ নিতে হবে। আমি জানি না, আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কি না।