নিজস্ব প্রতিবেদক : নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সমগ্র বিশ্ব এখন পর্যুদস্ত। বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মক সংকটে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। গতকাল চেম্বারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ মুহূর্তে বিশ্বের অর্থনীতিতে ও মানবজীবনে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, শিল্পোৎপাদন, আন্তর্জাতিক পণ্যের সরবরাহ চেইন, বেসামরিক বিমান পরিবহন, পর্যটন ব্যবসা, খুচরা ও পাইকারি ক্রয় বিক্রয়, আমদানি, রপ্তানি, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ হ্রাসসহ বেকারত্ব বাড়িয়ে অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। আঙ্কটাডের হিসাব মতে, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রাক্কলন করেছেÑবাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে প্রবৃদ্ধি প্রায় এক দশমিক এক শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এবং প্রায় আট লাখ ৯৪ হাজার ৯৩০ জন কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প, চামড়া, ওষুধ, পর্যটন, যোগাযোগ ও পরিবহন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন খাত হুমকির মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দার মুখে বাংলাদেশের প্রধান বাজার যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সংকুচিত হয়ে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশই লকডাউন ঘোষণা করায় বড় বড় বিপণিবিতান ও অনলাইন বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানি, রপ্তানি সংকুচিত হয়ে আসায় স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প কলকারখানাগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সববৃহৎ রপ্তানিকৃত পণ্য তৈরি পোশাকশিল্প প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ফার্মাসিউটিকাল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃজিজাতপণ্যসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণ সঞ্চারি বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির স্বার্থেই সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিসিসিআই কিছু সময়োপযোগী ও সহায়ক পরিকল্পনা ও নীতি সংশ্লিষ্ট সুপারিশ প্রস্তাব করছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে শিল্প-কারখানায় যাতে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন, ভাতা প্রদান করা যায় সে জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কাজে লাগিয়ে এক শতাংশ সুদে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানাগুলোকে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতকে আগামী এক বছরের জন্য ঋণের সুদ মওকুফ করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য সম্ভাবাময় রপ্তানি খাতকেও রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) স্কিমের আওতায় আনা যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোয় যাতে তারল্য সংকট দেখা না দেয়, সে জন্য আগামী এক বছরের জন্য ক্যাশ রিজার্ভ রেশিওর (সিআরআর) ন্যূনতম মাত্রা কিছুটা শিথিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি ঢাকা চেম্বার আহ্বান জানিয়েছে।
ডিসিসিআই অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘স্বল্প সুদের এমএসএমই অর্থায়ন সুবিধা’ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। তাছাড়া অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত রক্ষায় বাণিজ্যিক ভাড়ার ওপর, বিদ্যুৎ বিলের ওপর, গ্যাস ও পানির ব্যবহারের ওপর, লাইসেন্স নবায়নের ওপর আগামী এক বছর পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করতে ডিসিসিআই আহ্বান জানিয়েছে।
ডিসিসিআই মনে করেÑবেসরকারি খাতের আর্থিক ব্যয়ভার লাঘবে আমদানি, খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহƒত জিনিসপত্রাদি, মেডিকেল সরঞ্জাম এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদনশীল শিল্পের ওপর থেকে আগামী এক বছরের জন্য অগ্রিম কর (এটি) এবং ভ্যাট মওকুফ করতে পারে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যক্তিশ্রেণির কর আদায়ে ও করপোরেট কর হারে কিছুটা ছাড় প্রদানের বিষয়টি ভাবতে পারে।
করোনাভাইরাসের মারাত্মত প্রভাব থেকে জনগণ ও অর্থনীতিকে মুক্ত করতে ডিসিসিআই সরকারকে তার আন্তর্জাতিক বন্ধু রাষ্ট্র ও অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানায়। অর্থনৈতিক মন্দা যাতে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে বিশেষ জরুরি অর্থায়ন সুবিধার জন্য আবেদন জানাতে পারে, যা আমাদের আহরিত দুর্বল রাজস্ব আহরণের তুলনায় অর্থপ্রবাহ বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি, সব রাষ্ট্রীয় ঋণ পরিশোধের কিস্তি আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করতে সরকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রস্তাব দিতে পারে।