বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের লেনদেন শুরু

ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের সাড়া কম

মো. আসাদুজ্জামান নূর: এক বছর ধরে বেক্সিমকো লিমিটেডের তিন হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক বন্ড নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল এর লেনদেন শুরু হয়েছে। রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাল্টিপারপাস হলে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা থাকলেও উদ্বোধনী দিনে খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি বন্ডটি।

লেনদেন শুরুর দিনে বন্ডটির প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি বন্ডের লেনদেন শুরু হয় ১১০ টাকায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। দিন শেষে ১০১ টাকায় শেষ হয় এটি। আর দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৩৩ কোটি টাকার বন্ড। পরে মূলত ব্যাংকগুলো এ বন্ডের ইউনিট কিনেছে।

জানা গেছে, বন্ডটি প্রতি বছর ন্যূনতম ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে, যার পুরোটাই করমুক্ত। আবার বেক্সিমকোর লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি যতটুকু হবে, তার ১০ শতাংশ সুকুকের লভ্যাংশে যোগ হবে। প্রতি বছর সুকুকের ২০ শতাংশ টাকা তুলে নেয়া যাবে। অথবা এ টাকার বিনিময়ে বেক্সিমকোর শেয়ার নেয়া যাবে। সেই শেয়ার দেয়া হবে বাজারদরের ২৫ শতাংশ কম দামে। ফলে সেখানে ৩৩ শতাংশ বেশি মুনাফা হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বছরে মুনাফা ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হবে নিশ্চিতভাবেই। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।

এ বিষয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ফিদুল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের বন্ড নিয়ে খুব বেশি জানাশোনা নেই। আজকে (গতকাল) লেনদেন শুরু হয়েছে। আরও কিছুদিন দেখার পরে হয়তো বিনিয়োগকারীরা কেনার কথা ভাবতে পারেন।’

দেশীয় পুঁজিবাজারে বন্ডের চাহিদা কম হওয়ার বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বন্ডে বিনিয়োগে মুনাফা নির্ধারিত। এটা ১০০ টাকায় কিনলে ২০০ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই অল্প সময়ে যেসব বিনিয়োগকারী অধিক মুনাফা অর্জন করতে চান তারা বিনিয়োগে যেতে চান না। তারা যদি বিকল্প পান সেখানে ছোটেন, যার প্রভাব আইপিও আবেদনেও দেখা গেছে। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আবেদন খুবই কম ছিল।

পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর আগে সুকুকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। এ সময় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সুকুকের যখন চিন্তা করা হচ্ছিল, তখন আমাদের ধারণা ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে ব্যাপক সাড়া দেবে। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বন্ড নতুন হওয়ায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে।’

ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে সুকুকে বিনিয়োগ করা লাভজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন চিন্তা করা হচ্ছিল ব্যাংকের সুদের হার ৯ (ব্যাংক থেকে লোন নিলে) ও ছয় শতাংশ (ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে) করা হবে, তখন এ খাতের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেছিলেন, এটি ব্যবসায় সহায়ক হবে কি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে ৯ ও ছয় সুদের হারেও ব্যাংক ভালো ব্যবসা করছে।’

তিনি জানান, পুঁজিবাজারে এখনও দুটি বিষয়ে ঘাটতি আছেÑএকটি বন্ড মার্কেটের না থাকা, অপরটি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় না হওয়া। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব স্টক মার্কেটে ইক্যুইটি মার্কেটের তুলনায় বন্ড মার্কেট শক্তিশালী। ইক্যুইটির তুলনায় বন্ড মার্কেট বড় অথবা সমান সমান। তবে আমাদের এখানে উল্টো। এখন নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আছে।’

তিনি জানান, শুধু বেক্সিমকো সুকুক নয়, এরই মধ্যে ঢাকা সিটি কপোরশনের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনটি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুটি বন্ড ইস্যুর বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।

তার মতে, তিন হাজার কোটি টাকা যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হতো, তাহলে যে পরিমাণ জটিলতা হতো বন্ডের মাধ্যমে নেয়ায় তা সহজ হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের বড় বড় প্রকল্পে বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে। প্রয়োজনে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়ন করার প্রয়োজন হলেও এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যাবে।

তিনি বলেন, ‘একটি স্থিতিশীল মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি, রিটেল ইনভেস্টরদের অংশগ্রহণ থাকে কম। আমাদের এখানে উল্টো। এখানে রিটেল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ বেশি, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদর অংশগ্রহণ কম। ফলে পুঁজিবাজার গুজবভিত্তিক হয়ে থাকে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে এসে বাজারকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএসইসি। বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সেই চেষ্টা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এভাবেই বাজার দীর্ঘ মেয়াদের অর্থায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে যে কোনো বাধাই আসুক না কেন সেটা কাটিয়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করা হবে। আমরা শুরু থেকেই পণ্যে বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কথা বলে আসছি। বেক্সিমকো সুকুকের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বেশ কিছু পণ্য আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও সুকুক বন্ড ইস্যুর কাজ চলছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০