ব্যক্তি শ্রেণির করকাঠামোয় আসছে বড় পরিবর্তন

রহমত রহমান : দেশে একশ্রেণির ব্যক্তির আয় কমছে, আবার একশ্রেণির আয় বাড়ছে। আয় বাড়ার শ্রেণির এই ধনীদের থেকে খুব বেশি কর আদায় করা যায় না। মূলত করহারের কাঠামোর কারণে অনেক ধনী থেকে বাড়তি কর আদায় সম্ভব হয় না। তবে সেই ধনীদের টার্গেট করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেজন্য ২০২৪-২৫ করবর্ষে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয় ও করহার কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। যার ফলে সাধারণ করদাতারা স্বস্তি পাবেন।

এনবিআর বলছে, সাধারণ ও মধ্যম শ্রেণির করদাতাদের কর কমানো হচ্ছে, ধনীদের কর বাড়ানো হচ্ছে। একজন ধনী করদাতাকে বর্তমানে যেখানে এক কোটি টাকা আয়ের ওপর প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা কর দিতে হচ্ছে, সেখানে আগামী করবর্ষে একই করদাতাকে প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ টাকা কর দিতে হবে। আবার একজন মধ্যম শ্রেণির করদাতাকে বর্তমানে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপর প্রায় এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা কর দিতে হচ্ছে। সেখানে আগামী করবর্ষে দিতে হবে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কর কমবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, মোট আয় সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত করহার পরিবর্তন করা হয়নি। সাড়ে ৭ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর করহার বেশি পরিবর্তন করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা রয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ করবর্ষে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা হলে তাকে কোনো কর দিতে হবে না। সাড়ে তিন লাখ টাকার পরবর্তী এক লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। এছাড়া ৫ লাখ টাকার বেশি হলে সেই আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।

অপরদিকে, করমুক্ত আয়সীমাসহ চলতি করবর্ষে করহারের ছয়টি স্তর বিদ্যমান রয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ করবর্ষে করহারের দুটি বাড়তি স্তরযুক্ত করা হচ্ছে। তাহলোÑএকটি হলো ২০ লাখ টাকা আয়ের ওপর করহার ২৫ শতাংশ, অন্যটি হলো সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশের জায়গায় ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। এই দুটি স্তরের ফলে ধনী বা বেশি আয় যাদের রয়েছে, তাদের বেশি আয়কর ও সারচার্জ দিতে হবে। শুধু একটি স্তর যুক্ত করা হচ্ছে না, সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতাদের কর কমানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ করবর্ষে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা রাখা হয়েছে। পরবর্তী ১ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, যা বর্তমান করবর্ষে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া পরবর্তী ৪ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা বর্তমানে ৩ লাখ টাকা আয়ের ওপর কর দিতে হয়। পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা বর্তমানে ৪ লাখ টাকা আয়ের ওপর দিতে হয়। পরবর্তী আবার ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা বর্তমানে অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর দিতে হচ্ছে। তবে আগামী করবর্ষে ২০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ বাজেটে আয় ও করহারের সীমা দুটোই বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে সাধারণ ও মধ্যম শ্রেণির করদাতাদের কর কমানো হয়েছে। বেড়েছে বেশি আয়ের মানুষের।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষে একজন করদাতার বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যার ওপর বিদ্যমান করহার অনুযায়ী কর দিতে হচ্ছে এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ করবর্ষে একই করদাতার আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হলে তাকে প্রস্তাবিত করহার অনুযায়ী কর দিতে হবে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই করদাতাকে আগামী করবর্ষে ১৫ হাজার টাকা কম কর দিতে হবে। আবার চলতি করবর্ষে একজন করদাতার আয় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা হলে বিদ্যমান করহার অনুযায়ী তাকে কর দিতে হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আগামী করবর্ষে একই করদাতার একই আয় থাকলে তাকে প্রস্তাবিত করহার অনুযায়ী কর দিতে হবে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখানে করদাতা ২৫ হাজার টাকা কর কম দিতে হবে।

অন্যদিকে, ধনীদের আয়ে বেশি কর দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষে এক কোটি টাকা আয়ের ওপর বিদ্যমান করহার অনুযায়ী কর দিতে হচ্ছে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। সঙ্গে করদাতার সম্পদ অনুযায়ী তাকে সারচার্জ দিতে হয়। কিন্তু আগামী ২০২৪-২৫ করবর্ষে এক কোটি টাকা আয়ের ওপর প্রস্তাবিত করহার অনুযায়ী তাকে কর দিতে হবে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ একই করদাতাকে এক কোটি টাকার ওপর ২ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা বেশি কর দিতে হবে। এখানে শেষ নয়। ধনী এই করদাতার করহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সারচার্জ (সম্পদ কর) বেড়ে যাবে। এতে ধনী বা বেশি আয়ের করদাতা থেকে বেশি কর আদায়ে নজর দিয়েছে এনবিআর।

এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। বাড়ানো হলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা বা তার কিছু বেশি আয়ের কয়েক লাখ করদাতা করজাল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। আমাদের উদ্দেশ্য হলো করজাল বাড়ানো। এছাড়া সাধারণ ও মধ্যম শ্রেণির করদাতাদের কর কমিয়ে বেশি কর আদায়ই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্য আয় ও করহারÑদুটোতে এবার হাত দেয়া হয়েছে। সাধারণ করদাতা ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতাদের আয় বিবেচনায় নিয়ে কোনো কর বাড়ানো হয়নি। বরং কর কমানো হয়েছে। তবে ধনী বা বেশি আয় যাদের রয়েছে, তাদের কিছুটা বেশি কর ও সারচার্জ দিতে হবে। দেশে ধনী বা বেশি আয়ের করদাতা বাড়ছে। ২০২২ সালের পর মোট আয় ও করহারে খুব বেশি হাত দেয়া হয়নি। আগামী বাজেটে হাত দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ করদাতা ও মধ্যম শ্রেণির করদাতারা স্বস্তি পাবেন।

এনবিআর সূত্রমতে, সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০