ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তদারকি অভিযান অব্যাহত থাকুক

ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ এবং ওজনে কম দিতে নিষেধ করেছেন। ব্যবসাসংক্রান্ত ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনে স্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকলেও ক্রেতাসাধারণের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করছেন। অধিক মুনাফা লাভের নেশায় মত্ত থাকেন তারা। কেউ ওজনে কম দেন, কেউ মূল্যে কারসাজি করেন এবং অনেকে ভেজাল ও মেয়াদহীন পণ্য বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণা করেন। ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ আছে। ওই আইনের অধীনে ক্ষতিগ্রস্তরা আইনগত প্রতিকার দাবি করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষ ওই আইনে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মূলত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কিংবা খুচরা ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফালোভী মানসিকতার কারণে হয়। পবিত্র রমজানে বহু দেশের ব্যবসায়ীরা মুনাফার মানসিকতা বাদ দিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিক হারে। ঈদের কাপড় কেনাকাটায় অসাধু ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়তে হয় ভোক্তাদের। নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করার হিড়িক পড়ে দেশজুড়ে। আশার কথা, চলতি রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তা অধিকার বাস্তায়নের উদ্দেশ্যে দায়িরত্বরত কর্তৃপক্ষসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁচাবাজার কিংবা শপিং মলে অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণা রুখে দিচ্ছে, তাদের জরিমানার আওতায় আনছে। ওই অভিযানে দেখা যায়, নির্ধারিত মূল্যের স্টিকারের ওপর আরেক স্টিকার লাগিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে কিংবা নির্ধারিত মূল্যের স্টিকার তোলে ফেলে নিজেদের মতো দাম রাখা হচ্ছে কেউবা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয় করছে। কেউবা ওজনে কম দিচ্ছে। বহু দামি স্বর্ণের ওজনেও কারসাজি ধরা পড়েছে অভিযানে।

কর্তৃপক্ষের এরূপ অভিযানের ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের নানামুখী প্রতারণা দেখে গা শিউরে ওঠে। ব্যবসা হালাল (বৈধ) হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ঠকিয়ে থাকে অধিক মুনাফার লোভে। নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য কিনে প্রতারিত হন ভোক্তারা। তবে এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাঁড়াশি অভিযানের ফলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিযানের ফলে অনেক মার্কেটেই প্রতারণা বন্ধ হয়েছে, নতুবা ভোক্তারা সচেতন হয়েছে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থার সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়ার ফলে ভোক্তারা আগের চেয়েও অধিক সচেতন হয়ে পণ্য কিনতে পারছে, এতে প্রতারণা কমছে।

নিত্য পণ্যের পাশাপাশি বাসভাড়ায়ও প্রতারিত হন যাত্রীরা। ঈদ উপলক্ষে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের থেকে। বেসরকারি বা তো অবশ্যই, স্বয়ং বিআরটিসি বাসেও নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করা হয়। ঈদ উপলক্ষে সরকারিভাবে ভাড়া বৃদ্ধি না পেলেও চালক-সুপারভাইজার-কন্ট্রাক্টরদের অসাধু মানসিকতার বলি হয় যাত্রীরা। ট্রেনের টিকিটেও কারসাজি হয় ঈদ উপলক্ষে। সেখানেও অভিযান পরিচালনা করা বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এবার। সাধারণ নাগরিকদের চাওয়া নিত্যপণ্যের বাজারে, শপিং মলের পাশাপাশি বাস ট্রেনের ভাড়া বিষয়েও অভিযান পরিচালনা যেন বছরজুড়ে অব্যাহত থাকে। অসাধু ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের অধিক যেন আদায় করতে না পারে, ভোক্তারা যাতে প্রতারিত না হয়। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতিও আন্তরিক হতে হবে। পণ্যক্রয় কিংবা যেকোনো নাগরিক সেবা গ্রহণে কোনো নাগরিকই যেন প্রতারিত কিংবা ভোগান্তির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থী, বিজেম

কাঁটাবন, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০