পরিবহন খাত

ব্যবসায়িক ব্যর্থতায় ছিটকে পড়েছে চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক পরিবহন খাতের প্রতিষ্ঠান বাগদাদ এক্সপ্রেস। কয়েক বছর আগেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে মার্সিডিজ এসি বাস পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। শুধু বাগদাদ গ্রুপ নয়, শাহ আমিন গ্রুপের শাহ আমিন পরিবহন ও টিআর ট্রাভেলসের অবস্থাও একই। এভাবে চট্টগ্রামভিত্তিক পরিবহন খাতের দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি কোম্পানি ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ে। এ সুযোগে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে এগিয়ে আসছেন। 

পরিবহন খাতের ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, পরিবহন খাতের ব্যবসায়ী হিসেবে আহমদ নবী চৌধুরীর নামডাক ছিল। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তিনি মোটরপার্টস ও অয়েল এজেন্সির ব্যবসা করে আসছেন। এসব কারণে সহজে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের এ ঋণ সুবিধা পান। ব্যবসায় ব্যাংকঋণ বাড়লেও কিন্তু বাড়েনি ব্যবসার পরিধি, উল্টো সংকুচিত হয়েছে। আগেই বন্ধ হয়েছে শাহ আমিন পরিবহন ব্যবসাও। এরপর শাহ আমিন গ্রুপের বিভিন্ন খাতের ব্যবসাও রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে এ গ্রুপের ব্যবসা। ফলে পাওনা অর্থ আদায়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে ব্যাংক। গ্রুপটিকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখা। চট্টগ্রামের শাহ আমিন গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি পাওনা রয়েছে ১৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেসার্স শাহ আমিন উল্লাহ লুব্রিক্যান্টস অ্যান্ড গ্রিজ (প্রা.) ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে রয়েছে ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৯ টাকা, শাহ আমিন উল্লাহ অয়েল এজেন্সিজের কাছে রয়েছে ৬৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩১ হাজার ২১৩ টাকা এবং শাহ আমিন উল্লাহ ফিলিং স্টেশনের কাছে রয়েছে ২৪ কোটি ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৫ টাকা। এসব পাওনা আদায়ে ইসলামী ব্যাংক ঋণের বিপরীতে বন্ধকিকে থাকা তিন হাজার ৫৬৪ ডেসিমেল জমি নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিল।

অপরদিকে পরিবহন খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান বাগদাদ এক্সপ্রেস। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। প্রথম দিকে ঋণের পাওনা পরিশোধ নিয়মিত হলেও পরে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বারবার তাগাদা দিলেও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ। যদিও একসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে তারা মার্সিডিজ এসি বাস পরিচালনা করত। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাসগুলো এ রুটে সচল নেই। মূলত ব্যবসায়িক ও পরিচালনাগত ব্যর্থতায় তারা একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি হয়ে পড়েছে। সিটি ব্যাংকের খেলাপি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন ব্যবসায়ী ফৈরদৌস খান আলমগীর।

পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে পরিবহন ব্যবসায় আসে শাহ আমিন পরিবহন। এরপর এ রুটে প্রতি বছর নতুন নতুন বাস যোগ করা হলেও বর্তমানে এ রুটে শাহ আমিনের কোনো বাস নেই। একসময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে শাহ আমিন গ্রুপের শতাধিক বাস চলাচল করত। যদিও তার ইচ্ছা ছিল জ্বালানি খাতে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি।

আর বাগদাদ গ্রুপের তো মূল ব্যবসা ছিল সারের ডিলার। চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে সারের ব্যবসা থেকে একপর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন তিন সহোদর ফেরদৌস খান আলমগীর, তানভীর খান আলমগীর ও আজাদ খান আলমগীর। তারা পরে মৎস্য আহরণ, আবাসন, পরিবহনসহ আরও কয়েকটি খাতের ব্যবসায়ে আসেন। এরপর অতীতের সুনাম ও সম্পর্ককে ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো থেকে একের পর এক ঋণ সুবিধা নেন। প্রথমে ভালো লেনদেন করলেও পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন। একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের পাওনা আটকে যায়। এর মধ্যে বাগদাদ গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিলাসবহুল মার্সিডিজ বাসগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টিআর ট্রাভেলসসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবহন সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

নগরীর ওয়াসার মোড়ে গরীবউল্লাহ শাহ পয়েন্টে একাধিক বাস কাউন্টার রয়েছে। সেখানে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বছর খানেক আগেও বাগদাদ এক্সপ্রেস গাড়ি পরিচালনা করত। এখন গাড়িগুলো ডিপোতে পড়ে আছে। তাদের কাউন্টার এখন লন্ডন এক্সপ্রেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়েছে। এর আগে শাহ আমিনও বন্ধ হয়েছে। টিআর ট্রাভেলসও বন্ধ হয়েছে। এছাড়া গ্রিন লাইনও কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সৌদিয়া ও এস আলম ভালো আছে। আবার নতুনভাবে এলো স্বাধীন ট্রাভেলস নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। আসলে পরিবহন ব্যবসা করোনায় সংকুচিত হয়েছে। এখন অসম প্রতিয়োগিতার কারণে সবাই চাপে আছে।

পরিবহন ব্যবসা, খেলাপি ঋণ ও সার্বিক ব্যবসায়িক বিষয়ে সাম্প্রতিক কথা হলে শাহ আমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ নবী চৌধুরী বলেন, ব্যবসা আগের মতো নেই। মন্দা যাচ্ছে। খেলাপির বিষয়টি সঠিক। তারা পেপারেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তবে আমি এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারব না। এটা ইসলামী ব্যাংক ভালো জানে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০