ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া না কিনলে সরকারি গুদামে সংরক্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানি পশুর চামড়া নিয়ে গত বছর চলেছিল এক ধরনের নৈরাজ্য। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়। পানির দামে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক চামড়া বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় পচে। তবে এবার থেকে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ করা, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

গতকাল বুধবার মতিঝিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদের সুরক্ষা এবং সর্বোচ্চ বেনিফিট নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা কোনোভাবেই গত কোরবানি ঈদের মতো আর কখনও এ সম্পদ নষ্ট হতে দেব না। আজকের সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন কোরবানি ঈদে পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ ও বন, ধর্ম, তথ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চামড়া শিল্প-সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুপারিশ পেশ করবে।

সভায় জানানো হয়, কোরবানি পশুর চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে গতবার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যেসব দীর্ঘসূত্রতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কোরবানি পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য ট্যানারি মালিক, ফড়িয়া, মৌসুমি/এমেচারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, মসজিদের ইমাম, মাঠপর্যায়ে ইসলামী ফাউন্ডেশন, আলেম-ওলামাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে টেলিভিশনে টিভিসি, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যথাসময়ে কোরবানি পশুর চামড়া না কিনলে তা সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে গুদামে ন্যূনতম তিন মাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। এজন্য সরকারের রপ্তানি নীতি সংশোধন করার দরকার হলে তাও করা হবে। এছাড়া প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুজন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করবে। এজন্য তাদের প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সভায় আরও জানানো হয়, গত ঈদুল আজহায় আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয়ের জন্য ট্যানারি মালিকদের অনুকূলে ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ট্যানারিগুলো মোট ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ঈদুল আজহায় কোরবানির চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, চীনে করোনাভাইরাস বিস্তারের ফলে দেশীয় চামড়া শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করছে। ইউরোপের বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ট্যানারিগুলোকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন অর্জন করতে হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সার্টিফিকেশন অর্জনে অন্যান্য শর্ত পূরণে ট্যানারি মালিকদের আরও সক্রিয় হতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কোরবানির চামড়ার সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সে সঙ্গে কোরবানির চামড়া যাতে নষ্ট না হয় এবং তৃণমূলের চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টিও দেখতে হবে। সবার স্বার্থ রক্ষায় যা করণীয় সরকার সেটি করবে। 

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ট্যানারিগুলো যাতে ইউরোপের বাজার ধরতে পারে সেজন্য তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০