শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পথচারী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, হকার, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সোমবার রাতে শুরু হওয়া ওই সংঘর্ষ বিরতির পর গতকাল সকালে ফের শুরু হয়। সকাল থেকেই নিউমার্কেট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক ও সামনের সড়কে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, নিউমার্কেট পথচারী সেতুর নিচে অবস্থান নেয় পুলিশ। তাদের পেছনেই ছিল দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা।
পুলিশের আড়ালে থেকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল দুপুরে দেখা গেছে, পুলিশ নিউমার্কেটের সামনে থেকে যখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে, তখন দোকানের কর্মচারীরাও পুলিশের পেছনে থেকে ইট নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা কলেজের গেট ও ভবনের ছাদ থেকে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। তবে টিয়ারশেলের তীব্রতায় ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল মেরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা পিছু হটেনি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আমাদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল মারে। কিন্তু দোকান কর্মচারীদের কিছু বলেনি। তাদের পুলিশ সড়ক থেকে একবারও সরিয়ে দেয়নি।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বিকালে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন। তারা ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর আগে দুপুরে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ঢাকা কলেজে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বের হয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে নিউমার্কেটের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের শিকার হয়। ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করেন। প্রায় একই সময়ে ঢাকা কলেজের সামনে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বেলা সোয়া ৩টার পর সরকারি বাঙলা কলেজের একদল ছাত্র ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে একটি মিছিল নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে নিউমার্কেট এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকাল সোয়া ৪টার পর ওই এলাকায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে, ফিক্সড ইন্টারনেট (আইএসপি) সেবা যথারীতি চালু আছে বলে জানান আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সরকারি নির্দেশনা এখনও আমরা পাইনি।
আহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার শাহেদ শফিক, দীপ্ত টিভির সাংবাদিক আসিফ সুমিত, ক্যামেরাপারসন ইমরান লিপু, এসএ টিভির রিপোর্টার তুহিন ও ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন, মাই টিভির রিপোর্টার ড্যানি দ্রং, আরটিভির ক্যামেরাপারসন সুমন দে, ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর এবং আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু।
আহত আরও যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন, সাজ্জাদ, সেলিম, রাজু, কাওসার, রাহাত, আলিফ, ইয়াসিন, রুবেল ও রাজু।
হামলার শিকার শাহেদ শফিক ঘটনাস্থল থেকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরত্বে দাঁড়িয়ে খবর সংগ্রহের কাজ করছিলাম। এ সময় দেখতে পাই দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ জামান সুমিতকে ঘিরে ধরে হকাররা মারধর করছে। এরপর আমরা এগিয়ে গিয়ে তাকে রক্ষার চেষ্টা করতে গেলে তারা আমাদেরও মারধর করে।’
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাদের নিউরোসার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে যারা এসেছে, তাদের কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ২০ জনের মতো পেয়েছি। এদের মধ্যে অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।