ব্যবসায়ী দম্পতির সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

নজরুল ইসলাম: অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করতে প্রথমবার সম্পদ বিবরণীতে তথ্য দেননি। দ্বিতীয়বার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সেই তথ্য দিয়েছেন। নিজের অবৈধ সম্পদের বৈধতা দিতে স্ত্রীর নামে খোলেন আয়কর নথি। তারপরও রক্ষা হয়নি। দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছেন তারা। মনিরুজ্জামানের নামে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৯১ টাকা এবং তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার রুনার নামে দুই কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস মমালা দুটি দায়ের করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে। এই দম্পতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ভবনাথপুরের বাসিন্দা। তারা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাস করেন।

দুদক অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরুর পর মনিরুজ্জামান তার অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে স্ত্রী খাদিজার নামে ২০২০-২১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন।

এজাহারে বলা হয়, মনিরুজ্জামান ২০২১ সালের ২০ জুন সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে বলে দাবি করে তিনি ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি আবার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। প্রথমবার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি সোনারগাঁয়ের বৈদ্যের বাজারে ৯৬৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের তথ্য সম্পদ বিবরণীতে দেখাননি। দ্বিতীয়বার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ফ্ল্যাটের তথ্য দেন, যার মূল্য ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৫ টাকা।

মনিরুজ্জামান সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে চার কোটি ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫২০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য দেন। যাচাইকালে তার নামে চার কোটি ৮৭ লাখ ৪১ হাজার ৯০৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

২০০৯-১০ করবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিসহ তার বেতনভাতার বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, তিনি ২০০৯-১০ করবর্ষে মোট ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৯ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। ওই করবর্ষ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত মোট আয় দেখিয়েছেন তিন কোটি চার লাখ ৮৩ হাজার ১৬৭ টাকা। পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫৯ টাকা। মনিরুজ্জামানের চাকরির শুরু থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত বৈধ আয় পাওয়া গেছে তিন কোটি চার লাখ ৮৩ হাজার ১৬৭ টাকা। আয়কর পরিশোধসহ মোট ব্যয় ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫৯ টাকা। তার নিট আয় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৮ টাকা। তার ঋণ রয়েছে ৩৫ লাখ ২৮ হাজার ১৯ টাকা। ঋণসহ নিট সঞ্চয় দুই কোটি ৭৪ লাখ ১৬ হাজার ৮২৭ টাকা। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ টাকার। সেই হিসাবে তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৮৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৯১ টাকা। তিনি দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন।

খাদিজা আক্তার রুনার সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দুই কোটি ৮৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্জিত সম্পদের বিপরীতে তিনি দুই কোটি ৮৫ লাখ ১০ হাজার ৯২৭ টাকার আয়ের তথ্য দাখিল করেন, যার মধ্যে দুই কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪ টাকা আয়ের কোনো বৈধ কিংবা গ্রহণযোগ্য উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ২১ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৩ টাকা। আয়কর পরিশোধসহ তার পারিবারিক ব্যয় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সম্পদ অর্জনসহ তার পারিবারিক ব্যয় দুই কোটি ৮৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকা। অর্থাৎ তিনি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ দুই কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩ টাকা অর্জন করেছেন। তিনি দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন।

খাদিজার নামে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের সাহাপুরে ‘মেসার্স আক্তার অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে টাইলস, হার্ডওয়ার ও স্যানিটারি ওয়্যারের দোকান রয়েছে। আয়কর নথি অনুযায়ী তিনি ২০২০-২১ করবর্ষে ব্যবসা শুরু করেন। এছাড়া তিনি মহিমা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজার শেয়ারের মালিক, যার মূল্য তিন লাখ টাকা। এটি মূলত একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার ১৮ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুদক কীভাবে অবৈধ সম্পদ পেয়েছে, আমি তো জানি না। আমি ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন করেছি। তারা প্রথমে বলেছিল, আমি নাকি ইয়াবার ব্যবসা করি, ক্যাসিনোর ব্যবসা করি। এখন বলছে অবৈধ সম্পদ পেয়েছে। আমি আদালতে মোকাবিলা করব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০