ব্যবসার সহায়ক পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিন

বুধবার দেশের ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩-এর উদ্যোক্তা জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সিপিডির জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের ৬৬ শতাংশ বলেছেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতো ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। আর নতুন করে ডলার সংকটকে বাধা মনে করছেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। জরিপে মত প্রকাশকারীদের ৫০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত, অর্থনৈতিক স্থবিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৩৫ শতাংশ এবং বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী।

সিপিডির ব্যবসায় পরিবেশ নিয়ে উদ্যোক্তা জরিপে দেশের মানুষের অভিমতই প্রকাশিত হয়েছে বলে ধারণা। চলতে ফিরতে সাধারণ মানুষের যেসব মন্তব্য শোনা যায় জরিপ যেন সেটিরই প্রতিধ্বনি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও এর সঙ্গে একমত হবেন। জ্বালানি, দুর্নীতি ও ডলার সংকট অবশ্যই ব্যবসার পরিবেশের প্রধান বাধা, কিন্তু অন্য সমস্যাগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।  যেহেতু  তিনটি সংকটকে  গুরুত্ব মনে করছেন ব্যবসায়ীরা, তাই আগে সে সমস্যার সমাধান  করতে হবে।  আমরা মনে করি, প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জববদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করলে সংকট সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

সিপিডি এর আগেও উদ্যোক্তা জরিপ পরিচালনা করেছে; যথারীতি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কাছে ব্যবসায়র বাধা বিষয়ে জানতে চেয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিবারই ব্যবসায় প্রধান বাধা হিসেবে আসছে ‘দুর্নীতি’।

একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, বড় ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী বলে আমলা, সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন কম। কিন্তু দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ী। তাই তাদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রকে সক্রিয় হতে হবে। জ্বালানি ও ডলার সংকট বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতায় কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারি না।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়। ব্যবসার পরিবেশ সূচকে আমাদের অবস্থান সুবিধার নয়। মনে রাখতে হবে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর থাকলেই ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেন না, জাহাজীকরণ করতে পারেন না। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। শুধু কি তা-ই! এসব কারণে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সময়মতো বেতন দেয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে। নীতিনির্ধারকরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। অথচ বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করা গেলেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে বিদেশিরা আগ্রহী হবেন। ব্যবসা মানেই চ্যালেঞ্জ। ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণেও প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা কিন্তু সুশাসন ও জবাবদিহির সংস্কৃতি থাকলেই ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি সম্ভব। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। তাই যেসব বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে সমন্বিত ও সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০