‘কোটা সংস্কার অন্দোলন: ব্যবসায়ীরা চলমান অস্থিরতায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। চট্টগ্রামে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়েছে, ডলারের বিনিময় হার ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আলোচ্য প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান অস্থিরতার প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন খাতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চাপে হোক, কিংবা স্বেচ্ছায় হোক, কিংবা সুযোগ-সুবিধা ও মওকুফ-ছাড়-প্রণোদনা পেয়ে ব্যবসায়ীরা সাবেক সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি বলেছেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীরা চাপের মধ্যে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সদ্যবিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের ঘাড়ে যদি দুটা করে মাথা থাকত, তাহলে হয়তো সেই চাপ উপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তারা এখন নতুন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। নতুন সরকারের যেহেতু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলেরও কোনো বিষয় নেই, তাই আশা করা যায়, ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের উচিত হবে না সরকারকে বেকায়দায় ফেলে অনৈতিক ও অন্যায্য সুবিধা নেয়া। আগে আমরা দেখেছি, সরকার ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছে, ব্যাংক দখলসহ এমন কিছু কাজে সহায়তা করেছে, যেগুলো অনৈতিক সুবিধা হিসেবেই বিবেচিত হয় সাধারণ মানুষের কাছে।
আমার মনে করি, ব্যবসার পরিবেশ ও সুসাশন প্রতিষ্ঠা করা গেলে ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানে যাবেন না আগের মতো। বলা হয়ে থাকে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বড় বাধা অদক্ষ ও অসৎ প্রশাসন। ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে বড় এবং এসএমই’র ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজ করছে। নতুন সরকার সুশাসন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, অর্থায়নের পরিবেশ, বৈদেশিক বাণিজ্য, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, ব্যবসায় পরিচালনা, নিরাপত্তা প্রভৃতিতে মনোযোগ দিলে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে বলেই ধারণা।
ব্যাংকঋণের বেশিরভাগই করপোরেট বা বড় ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এসএমই খাত পর্যাপ্ত ব্যাংকিং সহায়তা না পাওয়ায় শিল্পবৈষম্য তৈরি হতে পারে। প্রশাসনের যে দক্ষতার অভাব আছে, সেটি যেমন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও সত্য। এজন্য উভয় দিক থেকে সংস্কার আনতে হবে। দক্ষ ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ সহজ করতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ বাড়াতে হবে। ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, তাই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য পরিবেশ উন্নয়নে সবকিছুই করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান করলেই চলমান পরিস্থিতির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন তারা।
ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচসহ যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে নতুন সরকারকে সর্বাত্মক প্রয়াস নিতে হবে।
