ব্যবসায়ী সাইফুল হককে দুদকে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবি ব্যাংকের অর্থ বিদেশে পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ী সাইফুল হককে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, অর্থ পাচারের ওই অভিযোগে সাইফুল হকের সঙ্গে একই সময়ে এবি ব্যাংকের পরিচালক বি বি সাহা রায়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানো সাইফুল হক সোমবার সকালে দুদক কার্যালয়ে হাজির হন।

কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তারা।

সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক কোম্পানি পিনাকল গ্লোবাল ফান্ডের (পিজিএফ) সঙ্গে মিলে বিনিয়োগের নামে এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে এই তদন্ত করছে দুদক। এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক ওই অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন বলে দুদক কর্মকর্তাদের সন্দেহ। সাইফুল হক স্কাই এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির পরিচালক। তার ওই কোম্পানি বাংলাদেশে ফ্লাই দুবাইয়ের এজেন্ট।

একসময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করা সাইফুলের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবি ব্যাংকে। তবে তিনি বিয়ে করেছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের দ্বিতীয় মেয়েকে। আর মোরশেদ খান ওই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। ফলে ব্যাংকের অনেক কাজেই সাইফুলের প্রভাব ছিল বলেও একাধিক সূত্রে জানা যায়।

এর আগে শুল্কমুক্ত কোটায় সাইফুলের স্কাই এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেডের আনা চারটি বিলাসবহুল গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে জব্দ করেছিল।

এবি ব্যাংকের অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, ছয় পরিচালক ও দুই সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

আর সাইফুল হককে হাজির হওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার ও রোববার দুই দফা সময় দিলেও ওই দুই দিন তিনি যাননি।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এবি ব্যাংকের অর্থ পাচারের ওই ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে। সে সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এম ওয়াহিদুল হক। মো. ফজলার রহমান ও শামীম আহমেদ চৌধুরী ছিলেন এমডির দায়িত্বে। তাদের পাশাপাশি ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড ট্রেজারি শাখার প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হেড অব করপোরেট মাহফুজ উল ইসলাম, হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, ওবিইউর কর্মকর্তা মো. আরিফ নেয়াজ, কোম্পানি সচিব মাহদেব সরকার সুমন ও প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা এমএন আজিমকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

আর এবি ব্যাংকের ছয় পরিচালক শিশির রঞ্জন বোস, মেজবাহুল হক, ফাহিমুল হক, সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন, রুনা জাকিয়া ও অধ্যাপক এম ইমতিয়াজ হোসাইনকে রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ বি ব্যাংকের দুই কোটি ডলার ও পিনাকলের আট কোটি ডলার মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে তা দুবাইয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালে।

এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়েই এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে দুই কোটি ডলার পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবুধাবির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। পরে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আর কথিত ওই বিনিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের পেছনে আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের সাইফুল এবং তার বন্ধু দুবাইয়ের নাগরিক খুররম আবদুল্লাহর ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করেন দুদক কর্মকর্তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০