নিজস্ব প্রতিবেদক : এক সময় বাংলাদেশে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অনুমোদন পেতে ১৫ দিন লাগত। এখন তিন থেকে পাঁচ মাস সময় লেগে যাচ্ছে। এছাড়া করপোরেট ট্যাক্স, অবকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। নিয়ন্ত্রণমূলক নানা ব্যবস্থার কারণেও বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অবস্থার যা উন্নতি হয় তা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই ধীরগতির। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু তার প্রয়োগ হয় না।
বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিজিসিসিআই) মধ্যাহ্নভোজ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। চেম্বারের সভাপতি তৌফিক আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তিরিঙ্ক, জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিন্স, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী, সেমস গ্লোবালের সভাপতি ও গ্রুপ এমডি মেহেরুন এন ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এইচটি ইমাম বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিন হয়েছে এটা আমি অবগত ছিলাম না। মনে হচ্ছে এতদিন আমি বোকার স্বর্গে বাস করছিলাম। একটা ব্যবসার বা ইভেন্টের অনুমোদন পেতে এত দিন কেন প্রয়োজন হয় তা আমি আলোচনা করে দেখতে চাই। তবে সরকারি ব্যবস্থা কীভাবে চলে তা অনেক ব্যবসায়ী জানেন না। এটাও একটা সমস্যা।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বেসরকারিকরণ করে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করেছিলেন। সে সময়ের আদমজির অংশ ছিল আজকের পারটেক্স। এভাবেই বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করছে আমাদের সরকার। তবে আমলাতান্ত্রিক কাঠামোয় কিছু সংস্কার দরকার বলে আমার মনে হয়।
দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাইনে না দাঁড়িয়ে আগে সেবা নিতে চায়, স্পিড মানি দেয় কিংবা সহজে কাজ পেতে চায় কারা? ব্যবসায়ীরাই। সুতরাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকেই কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য আছে তা স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা সমাধানে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তিরিঙ্ক বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তোরণের পরই অস্ত্রবাদে সবকিছু (ইবিএ) শুল্কমুক্ত থাকবে না। এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করছে। আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করছি। সরকারেরও এজেন্ডা রয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কমাতে হবে। ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর সুফল দরিদ্র ও ধনিদের মধ্যে সুষম বণ্টন করাতে হবে। আমরা দুর্নীতির কথা বলি এজন্য নয় যে বাংলাদেশকে আক্রমণ করতে চাই। আমরা বলি কারণ বিষয়টা সমাধানের জন্য আলোচনার টেবিলে থাকা দরকার।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, অবকাঠামো দুর্বল। নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় নানা সমস্যা রয়েছে। করপোরেট ট্যাক্স এখনও ৩৫ শতাংশের বেশি। ভ্যাট আইনে অস্পষ্টতা আছে। যৌথ উদ্যোগ চালুর জন্য বিদেশি পার্টনাররা আসতে চায় না, কারণ পরিবেশ ভালো না। এত কিছু নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি সরকারের সঙ্গে। কিন্তু তা প্রয়োগ হয় না। আমলাতন্ত্রে সংস্কার দরকার বলে সবাই স্বীকার করেন, কিন্তু বাস্তবে কিছু হয় না। এগুলো সমালোচনা করছি না, বরং সমস্যাগুলোর স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু আগের বছরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করি। নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লাভ কী? অন্যরা প্রতিযোগিতায় আরও এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা এখন সময়ের দাবি। আমরা কেন জাপান-কোরিয়া হতে পারছি না এ প্রশ্ন করতে হবে।
সেমস গ্লোবালের সভাপতি ও গ্রুপ এমডি মেহেরুন এন ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ার হার্ট হচ্ছে বেসরকারি খাত। ১৯৯২ সালে ছোট একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে শুরু করেছিলাম। এখন আমরা (সেমস গ্লোবার) একটা বহুজাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীর আয়োজক। কিন্তু দেশে আমরা সুবিধা পাচ্ছি না। একটা প্রদর্শনীর অনুমতি নিতে আগে ১৫ দিন লাগত। এখন তিন-পাঁচ মাস লেগে যায়। দেশে বাণিজ্য প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাণিজ্যের পাশাপাশি অভিজাত পর্যটনের বিকাশে সহায়তা করছি। কিন্তু এখানে প্রদর্শনীর জন্য পর্যাপ্ত যায়গা নেই। এসব অবকাঠামোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন করা দরকার।