ব্যবসা সম্প্রসারণের পরও হামিদ ফেব্রিকসের আয়ে ধস

নাজমুল ইসলাম ফারুক: দেশের অর্থনীতিতে বস্ত্র খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পিছিয়ে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হামিদ ফেব্রিকস লিমিটেড। ব্যবসা সম্প্রসারণের পরও প্রতিষ্ঠানটির আয়ে ধস নেমেছে। আর এর প্রভাবে পড়ছে কোম্পানির শেয়ারদরে।

তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ২০১২ সালে হামিদ ফেব্রিকস লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল তিন টাকা ২৭ পয়সা। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা তিন পয়সা। তালিকাভুক্তির বছর ২০১৪ সালে ইপিএস ছিল পাঁচ টাকা ৫৮ পয়সা। এক বছর পরই ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় এক টাকা ৮০ পয়সা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে তিন টাকা ৭৮ পয়সা। এদিকে চলতি বছর জুন ক্লোজিংয়ে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে এক টাকা এক পয়সা। এভাবে কমছে কোম্পানির আয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্তির আগে ভালো মুনাফা দেখায়। কিন্তু তালিকাভুক্তির পরপরই তাদের আয় কমতে থাকে। এসব কোম্পানি বিষয়ে সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তাছাড়া এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার  আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘কোনো কোম্পানি বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে কী ধরনের কাজ করবে, তা আইপিও অনুমোদনের সময় উল্লেখ থাকে। অর্থ উত্তোলনের পর সেসব কাজ করছে কি না, তা জানানোর দায়িত্ব কোম্পানির রয়েছে। তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তাদের অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছে কি না, তা যাচাই করা।’

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির দু’একটি ইউনিটের উৎপাদন কিছুদিন বন্ধ ছিল। আর এ কারণে কোম্পানির আয়ে এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে কোম্পানিটির ইয়ার্ন ডায়িং ইউনিট এবং ওভেনিং ইউনিট নতুন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হয়েছে।  এতে করে ভবিষ্যতে আয় বাড়বে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। এ অর্থ দ্বারা ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি আইপিও আসার সময় ২০১৪ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬১ কোটি টাকা। এদিকে ডিএসইতে দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুসারে কোম্পানিটির বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ৭০ কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

মুনাফা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্তির আগের বছর কোম্পানির মুনাফা হয়েছিল ২৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, তালিকাভুক্তির বছর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা; পরের বছরই তা কমে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়।

টার্ন ওভার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছর মার্চ মাসে কোম্পানির টার্ন ওভার হয়েছে ১০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময় যার পরিমাণ ছিল ১৩৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এদিকে প্রান্তিকের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২৬ পয়সা। আগের বছর একই সময় যার পরিমাণ ছিল ৩৬ পয়সা।

লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির শেয়ারদর ৬০ টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। যা দীর্ঘ দুবছরেও অতিক্রম করতে পারেনি। গত দুবছরে বেশিরভাগ সময়ই কোম্পানির শেয়ারদর কমতে দেখা গেছে। গত সোমবার কোম্পানির সর্বশেষ শেয়ারদর ছিল ২৩ টাকা ৮০ পয়সা। যা নির্দেশক মূল্যের চেয়ে অনেক নিচে অবস্থান করছে। বাজারে আসার সময় ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের নির্দেশক মূল্য ছিল ৩৫ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০