Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:54 am

ব্যাংকঋণের দায়: দেশবন্ধু পলিমারের মুনাফা ৫ বছরের মধ্যে সর্বন

পলাশ শরিফ: ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন প্রকল্পসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রকৌশল খাতের দেশবন্ধু পলিমার। গৃহীত ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা কমছে। গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশবন্ধু পলিমারের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ছিল; যা সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এক কোটি চার লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে আয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা বাড়লেও প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় চার কোটি ৩০ লাখ টাকা কমেছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির এনএভি এক টাকা ১৮ পয়সা ও ইপিএস ৯৭ পয়সা কমেছে। অন্যদিকে পাঁচ বছর আগের তুলনায় মোট আয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা ও পরিচালন মুনাফা প্রায় ১৬ লাখ টাকা বেড়েছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও বিক্রয়-বিপণন খরচ নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রি, আয় ও পরিচালন মুনাফায় খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা, ইপিএস ও এনএভি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, প্রায় ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদের কারণে আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি ও ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমায় দেশবন্ধু পলিমারের কর-পরবর্তী মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের ঋণের পেছনে প্রায় চার কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি; যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭৩ লাখ টাকা বেশি।

অন্যদিকে পাঁচ বছর আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রায় আড়াইগুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে ঋণের কারণে মাত্র এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছিল দেশবন্ধু পলিমার। এর বিপরীতে ওই অর্থবছরে ব্যাংকের ডিপোজিট থেকে প্রায় দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা আয় হয়েছিল; যা সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ কমে এক কোটি সাত লাখ টাকায় নেমেছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণ বৃদ্ধির বিপরীতে ডিপোজিট কমে যাওয়া ও ব্যাংকের সুদ-মুনাফার হারে উল্লেখযোগ্য হেরফের হওয়ার কারণেই সংকটের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে দেশবন্ধু পলিমারের মোট আয় ৫৬ কোটি ২৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে; যা এর আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ছিল। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় পাঁচ কোটি ২৩ লাখ টাকা কমেছে। তবে উৎপাদন খরচ কমায় পরিচালন মুনাফা ওই অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাত লাখ টাকা বেড়েছে। আয়-পরিচালন মুনাফা বাড়লেও এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা অর্ধেকের বেশি কমেছে। সেইসঙ্গে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি সম্পদও (এনএভি) কমেছে।

পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৩-১৪ সালে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ছিল দেশবন্ধু পলিমার। ওই অর্থবছরে সর্বোচ্চ আয়-মুনাফা করেছিল। টাকার অঙ্কে আয় প্রায় ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, পরিচালন মুনাফা নয় কোটি ২৪ লাখ টাকা ও কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় আট কোটি ১০ লাখ টাকা ছিল। এরপর থেকে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ অর্থবছরে এসে আয় প্রায় ৫৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, পরিচালন মুনাফা প্রায় ছয় কোটি তিন লাখ টাকা ও কর-পরবর্তী মুনাফা এক কোটি চার লাখ টাকায় নেমেছে। সর্বশেষ চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক পর্যন্ত সময়ে দেশবন্ধু পলিমারের পরিচালন মুনাফা দুই কোটি ১৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হয়। এরপরের বছরে উল্লেখযোগ্য হারে মুনাফা করলেও তারপর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর জের ধরে কমছে লভ্যাংশ প্রদানের হার। ২০১২ সালে বোনাস ও নগদ মিলিয়ে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ অর্থবছরে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। যে কারণে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১০ টাকা দর হারিয়ে অভিহিত মূল্যের নিচে নেমেছিল শেয়ারদর। তবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যবসা সম্প্রসারণের ঘোষণায় দর বাড়ছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে গতকাল দেশবন্ধু পলিমারের প্রতিটি শেয়ার ১৭ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে।