শেখ আবু তালেব: ব্যক্তিপর্যায়ের আমানতে ভর করে চলে দেশের ব্যাংক ব্যবসা। এই আমানত পেয়েই ব্যাংক ঋণ দেয় উদ্যোক্তাদের। কিন্তু বিতরণকৃত ঋণের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী ও করপোরেটদের দখলে। ব্যাংকও করপোরেটদের পেছনে ছুটছে। ফলে মোট ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। যদিও ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়ার এই প্রবণতাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। খাতওয়ারি ঋণ বিতরণ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকগুলোর করপোরেট ঋণ বিতরণে আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোয় করপোরেট ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে করপোরেটদের দখলে চলে গেছে ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় শিল্প, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ট্রেডিং, আমদানি-রপ্তানি, পানি, সড়ক ও আকাশপথের যানবাহন, বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য খাতের নামে গিয়েছে এসব করপোরেট ঋণ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণের কেন্দ্রীভূত হওয়ার দুটি দিক রয়েছে। ব্যাংকের দিক থেকে এটি সহজ ও লাভজনক। করপোরেটদের ঋণ দিলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। কিন্তু এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এতে মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি লাভবান হচ্ছে। সামষ্টিকভাবে অর্থনীতির সুফল মানুষ সুফল পাচ্ছে না।
খাতভিত্তিক ঋণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সাল শেষে বড় শিল্প খাতে ঋণ গেছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
২০১৮ সালে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশই ছিল এ খাতের। একক খাত হিসেবে ঋণের পরিমাণ ও মোট হিস্যা বেড়েছে বড় শিল্পের। এ খাতটিই এক বছরের ব্যবধানে ঋণ নিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এরপরই থাকা খুচরা ও পাইকারি খাতের ট্রেডিংয়ে ঋণ গেছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিভিন্ন খাতের ঋণ, যাতে গেছে এক লাখ চার হাজার ৭৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আমদানি খাতের ব্যবসায়ীদের কাছে যাওয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ ৬৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ শতাংশ। অপরদিকে রপ্তানি খাতে গেছে চার দশমিক ৮৭ শতাংশ বা ৪৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
নির্মাণ খাতে ২৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক গৃহায়ন বা ডেভেলপারদের কাছে ২৩ হাজার ৭০ কোটি, আকাশপথের বাহনে (বিমান ও হেলিকপ্টার) যোগাযোগ খাতে ছয় হাজার ৪৭৫ কোটি, লিজ ফাইন্যান্সে চার হাজার ৫১৬ কোটি ও সড়কপথের যানবাহন খাতে চার হাজার ৬৬ কোটি, পানিপথের যানবাহন খাতে তিন হাজার ৪৬৪ কোটি ও সেবা খাতের নামে গেছে ৬৬ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।
এভাবে করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে আট লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। যদিও বর্তমানে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।