নিজস্ব প্রতিবেদক: নীতি সুদহার বা পলিসি রেট বাড়ানোর এক দিনের মাথায় ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে মার্জিন ৩ শতাংশ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে স্মার্ট সুদহার রয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এতে করে অক্টোবরে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে হয় ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এ সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছেÑএমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে ৩ শতাংশের জায়গায় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করতে হবে। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ও পল্লিঋণের সুদহার
নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। এতে এখন কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। আর প্রি-শিপমেন্ট ও কৃষি ও পল্লিঋণের ক্ষেত্রে ৯.৭০ শতাংশে হারে সুদ।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে হয় ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। সবশেষ সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে অক্টোবর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল বলেন, পলিসি রেট বৃদ্ধি করার পর ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। মূলত পলিসি রেটটাকে কার্যকর করতে। এসব পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি কমাতে নেয়া হয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্যমাত্রা আছে ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা।
গত বুধবার রেপো সুদহার আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়। রিভার্স রেপো ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। স্পেশাল রেপো সুদহার হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দেয়া হয়।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।